বন্যায় জলস্তর যেভাবে ফুঁসছে তাতে ক্ষতি হতে পারে তাজমহলের। সম্প্রতি এমন একটি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে, তাজমহলের গঠনের জোরেই বন্যা বিশেষ ক্ষতি করতে পারবে না। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল হিমাচলের শিব মন্দিরেও। প্রবল বন্যাতেও অলৌকিক ভাবে রক্ষা পেয়েছিল সেই মন্দির। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হিমাচলের পঞ্চবক্ত্র মন্দির। মহাদেব পূজিত হন এই মন্দিরে। শতাব্দীপ্রাচীন এই মন্দির ভক্তদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। তবে মন্দিরটি নজর কেড়েছিল অন্য একটি কারণে। প্রবল বন্যাতেও সেটির বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। যে ঘটনায় আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন প্রায় প্রত্যেকেই।
আরও শুনুন: রসগোল্লা সন্দেশকে টেক্কা দিয়ে বিশ্বসেরা মিষ্টির তালিকায় দক্ষিণের বিখ্যাত মিষ্টি, কী জানেন?
২০১৩ সালে ব্যাপক বন্যায় বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় মান্ডি জেলা। সেখানেই এই মন্দিরটির অবস্থিত। বন্যার রোষ এতটাই যে, আধুনিক বিল্ডিং, রেস্তরাঁ – কোনও কিছুই জলস্রোতের তীব্র আঘাত থেকে রক্ষা পায়নি। কিন্তু সেই বিধ্বংসী পরিস্থিতিতেও অবিকৃত ছিল মন্দির। স্থানীয়দের মধ্যে বরং আশঙ্কা ছিল। এত প্রাচীন মন্দির। বন্যায় তা আর আস্ত থাকবে না, এমনটাই ছিল আশঙ্কা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেরকম কিছুই হয়নি। বরং আধুনিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অবিকৃত ছিল এই প্রাচীন মন্দির। এমন নয় যে বন্যর জল মন্দিরে আঘাত করেনি। বন্যার পরে বিপুল জঞ্জাল সরানো হয় মন্দির চত্বর থেকে। কিন্তু মন্দিরের কাঠামোর কোনও ক্ষতি হয়নি। বন্যায় এলাকা প্রায় ডুবে গিয়েছিল, সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। অথচ মন্দিরটি যেভাবে দাঁড়িয়েছিল তা অবাক করার মতোই। স্থানীয়দের বিশ্বাস ছিল, মহাদেবের শক্তিই মন্দিরটিকে রক্ষা করেছে। অনেকে বলাবলি শুরু করেছিলেন যে, কেদারনাথ মন্দির যেভাবে রক্ষা পেয়েছিল, অনুরূপ ঘটনাও ঘটেছে এক্ষেত্রে।
আরও শুনুন: সোনা বা অন্য কিছু নয়, মেয়ের সমান ওজনের টম্যাটো দিয়ে ‘তুলাভরম’ দম্পতির
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল মন্দিরের গঠন। প্রাচীনকালে, মন্দিরগুলি যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল, তার জোরেই শতাব্দীপ্রাচীন হয়েও মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি। প্রাচীন মন্দিরগুলির গঠন শুধু সৌন্দর্যমণ্ডিতই নয়। নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কীভাবে সৌধগুলি রক্ষা করা যায় তা-ও আয়ত্ত ছিল সেকালে। সেই বিদ্যার জেরেই প্রাচীন হয়েও মন্দির অক্ষত থেকেছে। একই কথা প্রযোজ্য তাজমহলের ক্ষেত্রেও। প্রাচীন এই সৌধেও জলনিকাশি ব্যবস্থা এমন পর্যায়ের যে তা সৌধের কোনও ক্ষতি করবে না বলেই মনেকরা হচ্ছে।
আরও শুনুন: এই চার গ্রামের জনসংখ্যা শূন্য! ১৪০ কোটির ভারতে এমনটা কীভাবে সম্ভব, উঠছে প্রশ্ন
ফেরা জ্যাক মন্দির প্রসঙ্গে। বন্যার পর মন্দিরকে অবিকৃত থাকতে দেখে ভক্তদের মধ্যে উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সেতু পর্যন্ত যেখানে বিপর্যস্ত হয়েছে, সেখানে মন্দিরের এই অবিচল থাকা দৈবী মহিমা বলেই ভাবতে শুরু করেন। বন্যার পর ভক্তদের ভিড় দেখে এক পুরোহিত তাই বলেছিলেন,প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসই বাড়িয়ে দিয়েছিল আরও খানিকটা। তবে এ কথা মানতেই হয় যে,প্রাচীন ভারত স্থাপত্যবিদ্যায় এতটাই উন্নত ছিল যে, বিধ্বংসি বিপর্যয় সামাল দেওয়ারও ক্ষমতা আছে শতাব্দীপ্রাচীন মন্দিরের। সুতরাং এ যে সত্যিই বিস্ময়ের তা বললে অবশ্য বাড়াবাড়ি হয় না।