শ্রাবণ মাত্রেই দেবাদিদেবের প্রিয় সময়। এই মাসে প্রতি সোমবার পুজো করলে বিশেষ তুষ্ট হন মহাদেব। একইসঙ্গে শ্রাবণ মাসের শনিবার গ্রহরাজের পুজোরও নিয়ম রয়েছে। অধিকাংশ শনি মন্দিরেই এই মাসে বার্ষিক পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে এই দুজন ছাড়াও, শ্রাবণমাসে আরও এক দেবতার পুজো করলে বিশেষ লাভ হতে পারে। কোন দেবতার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
বাংলা পঞ্জিকায় শ্রাবণমাসে একাধিক পুজোর উল্লেখ রয়েছে। দেবাদিদেব মহাদেব এবং গ্রহরাজের পুজো সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। প্রতি সপ্তাহের সোম ও শনিবার এই দুই দেবতার পুজোর নিয়ম রয়েছে। তবে শুধু এই দুই দেবতা নয়। শ্রাবণে পুজো করা যেতে পারে কুবেরদেবেরও।
আরও শুনুন: কোথাও প্রসাদ মদ, কোথাও বছরভর জলের তলায় মহাদেব, দেশের ৫ বিশেষ শিবমন্দির চেনেন?
আগে জেনে নেওয়া যাক কে এই কুবেরদেব?
শ্রী কুবের, দেবী লক্ষ্মীর ধনরক্ষক। পুরাণ অনুযায়ী তিনি ধন ও ঐশ্বর্যের দেবতা। এ প্রসঙ্গে একাধিক পৌরাণিক আখ্যান মেলে। তাঁর সঙ্গে লঙ্কাধিপতি রাবণেরও যোগ মেলে। কথিত আছে, তিনি রাবণের সৎ ভাই। পুরাণমতে সোনার লঙ্কাও আসলে কুবেরই তৈরি করেছিলেন। এমনকি পুস্পক রথটিও কুবেরেরই ছিল। স্বয়ং রাবণ সেইসব কিছু থেকে কুবেরকে বঞ্চিত করেন। পীড়িত কুবের লঙ্কা ছেড়ে কৈলাসের কাছে অলকাপুরীতে থাকতে শুরু করেন। তাই বৈদিক পাঠে কুবেরকে রাক্ষস আখ্যা দেওয়া হয়। আবার মহাভারত, রামায়ণ জাতীয় ধর্মগ্রন্থে তিনি কেবলই ধন দেবতা। তবে মজার বিষয় হল, সংস্কৃতে কুবের শব্দের অর্থ ‘বিকলাঙ্গ’ বা ‘ভয়ঙ্কর’৷ তাঁর প্রচলিত কোনও মূর্তি সেই অর্থে চোখে পড়ে না। বাড়িতে কুবের আরাধনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট যন্ত্রম প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। দীপাবলির আগে ধনতেরস উৎসব পালন করা হয় কুবেরকে প্রাধান্য দিয়েই। সেইদিন তাঁর আরাধনায় মেতে ওঠেন মর্তবাসী। পুজোয় নতুন ধাতু ব্যবহারের চল রয়েছে। স্রেফ হিন্দুধর্ম নয়। কুবেরের অস্তিত্ব জৈন এবং বৌদ্ধ পৌরাণিক কাহিনীতেও মেলে৷
তবে শ্রাবণ মাসের সঙ্গে তাঁর ঠিক কী যোগ?
আরও শুনুন: কেনা-কাটায় মানা, বদল নয় ঠিকানাতেও! মল মাসে মানতে হয় আর কী কী নিয়ম?
এক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখ করতে দেবাদিদেবের প্রসঙ্গ। কৈলাসে বসবাসের সুবাদে কুবেরকে মহাবেদের দ্বাররক্ষী বলে থাকেন অনেকেই। সেই অর্থে মহাদেবের সঙ্গে কুবেরের বিশেষ যোগ রয়েছে। তাই শ্রাবণমাসে শিবের মতোই কুবের পুজো করলে বিশেষ সৌভাগ্যলাভ হয়। পুজোর ক্ষেত্রে বিশাল কোনও আয়োজনের দরকার নেই। ভক্তিভরে শুদ্ধচিত্তে পুজো করলেই তুষ্ট হন কুবের। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, পুজোর জায়গা যেন পরিষ্কার থাকে। পুজোর সময় অবশ্যই মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালবেন। যে কোনও ফুল দিয়েই কুবেরের পুজো করা যেতে পারে। স্নান সেরে পুজোর স্থান ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে পুজোয় বসা উচিত। যেহেতু সেই অর্থে কোনও মূর্তি থাকে না, তাই কুবের যন্ত্রটিকে পুজোর আগে ভালভাবে মুছে নিতে হবে। তারপর বীজমন্ত্র জপ করতে হয় ১০৮ বার। শ্রাবণের ত্রয়োদশী তিথিতে এই পুজো করলে শুভাশুভ ফল মেলে। তবে কেউ যদি গোটা শ্রাবণমাস জুড়েই কুবেরদেবের আরাধনা করেন, তার থেকে মঙ্গলজনক কিছু হয় না।