চারিদিকে জল। কোথাও মানুষের চিহ্নমাত্র নেই। শুধু মানুষ কেন, মাঝসমুদ্রে পশু পাখির দেখা মেলাও ভার। থাকার মধ্যে শুধু মাছ আর বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী। অথচ এমনই জায়গায় টানা দু-মাস কাটিয়েছেন এক ব্যক্তি। সেখানে সঙ্গী বলতে ছিল, স্রেফ তাঁর পোষ্য কুকুরটি। কীভাবে এতগুলো দিন সমুদ্রের মাঝে কাটালেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
ঠিক যেন লাইফ অফ পাই! সিনেমায় দেখানো হয়েছিল, মাঝ সমুদ্রে যুবকের দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার গল্প। বাস্তবেও ঠিক তেমনটাই হয়েছে। মাঝ সমুদ্রে হারিয়ে গিয়ে টানা দু-মাস কাটিয়েছেন এক ব্যক্তি। জীবিত অবস্থায় ফিরেও এসেছেন তিনি। শুধু তফাৎ বলতে তাঁর সঙ্গে থাকা প্রাণীটির। সিনেমায় যুবকের সাথে ছিল আস্ত একটা বাঘ। আর এক্ষেত্রে ব্যক্তির সঙ্গ দিয়েছে তাঁর পোষ্য কুকুর।
আরও শুনুন: মাত্র ২৭ জন মানুষের বাস, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ কোনটি জানেন?
ঘটনাটি মেক্সিকোর। সেখানকার লা পাজ শহর থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেছিলেন বছর ৫১-র টিম শ্যাডোক। গন্তব্য ছিল পলিনেশিয়া। প্রায় ৬০০০ কিমি-র বেশি এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গী হিসেবে ছিল পোষ্য কুকুর বেলা। ছোট্ট নৌকায় যাবতীয় প্রয়োজনের জিনিসপত্র নিয়ে রওনা হয়েছিলেন টিম। কিন্তু মাঝপথে যে এমন বিপদের মুখে পড়বেন তা ভুলেও ভাবেননি। প্রায় অর্ধেকেরও বেশি পথ পেরিয়ে ভয়ঙ্কর এক ঝড়ের মুখে পড়ে টিমের নৌকা। জিনিসপত্র ,খাবার-দাবার যা ছিল, তার প্রায় সবটাই ভেসে যায় জলের তোড়ে। এমনকি নৌকার বিদ্যুৎ সংযোগও বিছিন্ন হয়ে যায়। আলো জ্বালানো বা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনও উপায় ছিল না টিমের। অগত্যা মাঝ সমুদ্রে ওই ভাবেই অপেক্ষা করতে শুরু করেন। কিন্তু মাঝ সমুদ্রে এভাবে থাকা তো আর মুখের কথা নয়! তারওপর, কোনও খাবার নেই কাছে। এমনকি পান করার মতো জলটুকুও নেই। বেশ কয়েকদিন অভুক্ত অবস্থাতেই কেটে যায় তাদের। এরপর নিজে থেকেই এক ফন্দি বার করেন টিম। কিছু না খেয়ে তো বেঁচে থাকা অসম্ভব! আর মাঝ সমুদ্রে মাছ ছাড়া কিছু খাওয়ার মতো নেই। কিন্তু সমুদ্রে তো রান্না করার উপায় নেই। তাই কাঁচা মাছই খেতে শুরু করেন তিনি। আর তেষ্টা মেটাতেন বৃষ্টির জল পান করে। এভাবেই টানা দু-মাস কাটিয়ে ফেলেন তিনি। অবশেষে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘদিন ওইভাবে কাটিয়ে খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবে গুরুতর কিছু হয়নি।
আরও শুনুন: কবে আর কতটা বৃষ্টি হবে, আগেই নির্ভুল ভাবে জানিয়ে দেয় এই মন্দির
আর এতেই বেজায় অবাক হয়েছেন চিকিৎসকেরা। একেবারেই অভ্যস্ত নন, এমন রুটিনে দু-মাস কীভাবে কাটিয়ে দিলেন টিম তা ভেবেই অবাক সকলে। যদিও এ নিয়ে টিম বিশেষ অবাক হননি। তাঁর দাবি, সমুদ্রের মাঝে প্রথম কয়েকদিন বেশ অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু তারপর অভ্যাস হয়ে যায়। বৃষ্টির জল আর কাঁচা মাছ খিদে-তেষ্টা মিটিয়ে দিত। আর কড়া রোদ কিংবা ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে নোউকার পালটাকেই ব্যবহার করতেন টিম। সেইসঙ্গে সারাদিন যথেষ্ট বিশ্রাম নিতেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাই শারীরিক অসুস্থতা তেমন হয়নি। সমস্যা হত একা থাকা নিয়ে। সঙ্গীহীন সমুদ্রের মাঝে একা কাটাতে বেজায় অসুবিধা হত তাঁর। উদ্ধার হওয়ায় সেই সমস্যা মিটেছে। তবে এই অভিজ্ঞতা তিনি যে কোনওদিন ভুলবেন না, একথা বলাই বাহুল্য।