যেসব মানুষের ঘর নেই, সেই গৃহহীনদের মাথার উপর ছাদের জোগাড় করতে চান তাঁরা। নিজেদের সামর্থ্য কম, তাতেও পরোয়া নেই। দেশবাসীর থেকে ১ টাকা করে চাঁদা পেলেই তো যথেষ্ট। আর এই ‘মিশন ওয়ান রুপি’ প্রকল্পটি সফল করতেই সাইকেল চালিয়ে সারা দেশে পাড়ি দিচ্ছেন এই দুজন। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁদের কথা।
নগরে দুর্ভিক্ষ। বুদ্ধ স্বয়ং তাঁর শিষ্যদের কাছে জানতে চাইছেন, কে এই বুভুক্ষু মানুষদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পারে। কিন্তু গোটা নগরকে খাওয়ানোর ভার কে নেবে? কুণ্ঠায় পিছিয়ে যাচ্ছেন বড় বড় বণিক, মহাজনেরা। এমন সময় সেই ভার তুলে নিলেন এক সাধারণ মেয়ে। তাঁর পিতা বৌদ্ধ ভিক্ষু, তিনি নিজে ভিক্ষুণী, কী সাধ্য তাঁর যে সকলকে খাওয়াবেন? সকলের প্রশ্নের উত্তরে ভিক্ষুণী সুপ্রিয়া জানিয়েছিলেন, ‘আমার ভাণ্ডার আছে ভরে/ তোমা সবাকার ঘরে ঘরে।’ ‘নগরলক্ষ্মী’ কবিতায় সেই গল্পই শুনিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। একার সাধ্যে যা কুলোয় না, অনেকে হাত বাড়ালে যে সেই সাধ পূরণ হতে পারে, সে কথাই বলে এই কাহিনি। আর সেই ভাবনা নিয়েই এগিয়ে চলেছেন কেরলের এই দুই ব্যক্তি। গৃহহীন মানুষদের ঘর দেওয়ার স্বপ্নেই পথে নেমেছেন তাঁরা। সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন গোটা দেশ। সারা দেশের মানুষের কাছ থেকে মাত্র এক টাকা করে চাইছেন তাঁরা। একজনের কাছে যা কিছুই নয়। কিন্তু সকলের সেই সামান্য টাকা জড়ো করলেই তা বদলে দিতে পারে অনেকের জীবন। আর সেই বদলের স্বপ্নই দেখছেন এই দুই বন্ধু।
আরও শুনুন: নারী-পুরুষ সকলেই পাবেন পেনশন, শুধু বিয়ে না করলেই হল! কোন রাজ্যে চালু অভিনব প্রকল্প?
টি আর রেনিশ এবং কে জি নিজিন, দুজনেই কেরলের বাসিন্দা। তবে এই মুহূর্তে কোনও স্থায়ী আস্তানা নেই তাঁদের। অন্যদের ঘর দিতে চান বলেই নিজেদের ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন তাঁরা। বিশেষ করে যে মানুষেরা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, যাঁদের নিজেদের স্বপ্ন পূরণের উপায় নেই, তাঁদের ঘর বানিয়ে দিতে চান এই দুই ব্যক্তি। রেনিশ পেশায় মোবাইল মেকানিক, আর নিজিন হাই স্কুলের শিক্ষক। কারোরই অত সাধ্য নেই। কিন্তু তার জন্য পিছু হটতে রাজি ছিলেন না কেউই। তাই দুটি বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। সাইকেল দুটিকে অবশ্য একটু অদলবদল করে ক্যারাভানের মতো করে নিয়েছেন তাঁরা। আর সেই চলমান বাড়িতেই আপাতত রাত কাটে দুজনের। আর দিনের বেলায় সাইকেল চালিয়ে একেক দিনে ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন তাঁরা। গায়ের জামায় লেখা থাকে, ‘এক টাকা দিন, আর অন্য কারও জীবন বদলে দিন’।
আরও শুনুন: একসঙ্গে পুজো দেন হিন্দু-মুসলিম, কোথায় রয়েছে এমন মন্দির?
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কেরলের কাসারগড় থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন দুই বন্ধু। এতদিনে যত টাকা উঠেছে, তাতে ওয়েনাড়ে প্রায় দশহাজার বর্গফুটের মতো জমি কিনতে পেরেছেন তাঁরা। এখন আরও মানুষের কাছে যাতে এই বার্তা পৌঁছয়, সেই চেষ্টাই করছেন দুই বন্ধু।