মৃত ২৮৮। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০০০। ঘটনার পর পেরিয়েছে প্রায় ৭২ ঘন্টা। তবু এখনও কাটেনি আতঙ্ক। যারা ভাগ্যের জোরে ঘরে ফিরলেন তাঁরা হয়তো কোনদিন এই রাতের কথা ভুলতে পারবেন না। ঘটনার কারণ খুঁজতে তোলপাড় দেশের রাজনৈতিক মহল। রাতের ঘুম ছুটেছে পুলিশ গোয়েন্দা সকলেরই। কিন্তু এসবের মাঝেও সাম্প্রদায়িক হিংসার তোড়জোর করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে কেউ কেউ। তাও আবার এই করমন্ডল ট্রেন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এই ছবি ঘিরে উঠেছে এক অদ্ভুত দাবি। ঠিক কী বলা হয়েছে? আসুন শুনে নিই।
২৮৮ জনের মৃত্যুও মুছতে পারল না সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। করমণ্ডল রেল দুর্ঘটনাতেও সাম্প্রদায়িক প্রলেপ চাপাতে ব্যস্ত নেটদুনিয়ার একাংশ। ভাইরাল হওয়া ছবি ঘিরে অদ্ভুত এক দাবি উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু সেই দাবি যে গুজব ছাড়া কিছুই নয়, তা কিছুক্ষণের মধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে। একইসঙ্গে এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেও যারা সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে চেয়েছেন, তাঁদের রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওড়িশা পুলিশ।
আরও শুনুন: হঠাৎ জোরালো ঝাঁকুনি, বাইরে আগুন, অভিশপ্ত ট্রেন থেকে বেঁচে ফেরাও যেন ‘অলৌকিক’
সাম্প্রতিক রেল দুর্ঘটনার ইতিহাসে এমন বীভৎস ঘটনার নজির নেই বললেই চলে। তাই করমণ্ডল রেল দুর্ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশবাসী। জোর কদমে চলছে উদ্ধার কাজ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সরেজমিনে সবটা দেখছেন রেলমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু এই এত উদ্বেগের মাঝেও কেউ কেউ চাইছেন এই ঘটনাতেও সাম্প্রদায়িকতার প্রলেপ পড়ুক। বিতর্কের সূত্রপাত একটি ছবি ঘিরে। উপর থেকে তোলা দুর্ঘটনা স্থলের একটি ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে রেললাইনের পাশে উলটে পড়ে আছে ট্রেনের বগি। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাত্রীদের জিনিসপত্র। আর ঠিক তার পাশেই একটা মাঠ। যার শেষের দিকে একটা সাদা রঙের বাড়ি। ছবিটি উপর থেকে তোলার দরুন বোঝার উপায় নেই, বাড়িটি আসলে কী। আর সেখানেই যত সমস্যা। এই ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ওই বাড়িটি আসলে একটা মসজিদ। সেইসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে দুর্ঘটনার দিনটি ছিল শুক্রবার, অর্থাৎ মুসলিমদের জুম্মাবার। ব্যস এতটুকুই যথেষ্ট। সরাসরি কিছু উল্লেখ না থাকলেও অনেকেই ঘটনার সঙ্গে ওই মসজিদের যোগ খুঁজতে শুরু করেছেন। লাইক কমেন্ট শেয়ারের ভিড়ে, যেন পারতপক্ষে সেই দাবিই সত্যি হয়ে ওঠে। ছবিটিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
আরও শুনুন: সবার ‘বস’ মোদি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চেয়েও উচ্চ আসনে প্রধানমন্ত্রীকে বসালেন খট্টর!
কিন্তু ওই বাড়িটি কি আদৌ মসজিদ? প্রথমে সে বিষয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করেননি কেউই। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তখন স্রেফ হিংসার ছড়াছড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনে আসে আসল সত্যি। জানা যায়, বাড়িটি আদৌ কোনও মসজিদ নয়। এমনকি কোনও সাধারণ বাড়িও নয়। নির্মিয়মান একটি কৃষ্ণ মন্দির। উপর থেকে ওই মন্দিরের চূড়া দেখেই মসজিদের মতো মনে করেছেন কেউ কেউ। ওই বাড়িটি আসলে মন্দির, এই তথ্য সামনে আসার পরই আপাতভাবে সব শান্ত। কিন্তু এমন গুজবের আদৌ কি কোনও প্রয়োজন ছিল? যেখানে এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল, মানুষের জীবন কতটা অনিশ্চিত, সেখানে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন অবশ্যই কাম্য নয়। ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন ওড়িশা পুলিশের কর্তাব্যক্তিরাও। ভবিষ্যতে এমন গুজব কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না এমনটাও সাফ জানিয়েছেন তাঁরা। একদিকে দিনরাত এক করে উদ্ধারকাজে ব্যস্ত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনি। বিভিন্ন ষ্টেশনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আহত যাত্রীদের পরিবার। ভিড় কম নয় মর্গের বাইরেও। দেহ শনাক্তকরণের মতো নির্মম কাজ করতে হচ্ছে কাউকে। সেখানে ঘটনার কারণ হিসেবে বিশেষ সম্প্রদায়কে ইঙ্গিত! সত্যি এর থেকে একটা প্রশ্ন উঠে আসতে বাধ্য, স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরও কোন দিকে এগোচ্ছে দেশ? মানুষের প্রাণের চেয়েও কি বড় হয়ে উঠছে ধর্ম? হয়তো তাই। এবং আগামীদিনে এই ভয়াভহতা হয়তো আরও বাড়বে, এমনটাও আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।