রাস্তার ধারে সার দিয়ে দোকান। সব দোকানেই বিক্রির জন্য বিভিন্ন সামগ্রী রাখা। শুধু সেখানে কোনও দোকানদার নেই। অথচ এই দোকানগুলো থেকে চুরি হয় না কিছুই। জিনিস নেওয়ার পর অবশ্যই নির্দিষ্ট দাম মিটিয়ে যান গ্রাহক। কোথায় রয়েছে এমন অদ্ভুত দোকান? আসুন শুনে নিই।
সততাই পরম ধর্ম। একথা বোধহয় স্রেফ নীতিকথা-র বইতেই দেখা যায়। বাস্তবে এর প্রয়োগ কতজন নিজের জীবনে করতে পারেন তা বলাই বাহুল্য। সৎ থাকার হাজার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতির চাপে তা বদলাতে বাধ্য হন অনেকেই। কিন্তু দেশে এমনও রাজ্য রয়েছে যেখানে এই সততার একেবারে বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায়।
আরও শুনুন: মঙ্গলসূত্র দান করে মিলল এক লাখের হার, ‘দেবতার আশীর্বাদে’ অভিভূত মহিলা
কথা বলছি মিজোরাম রাজ্যের। সেখানকার অধিকাংশ দোকানেই কোনও দোকানদার থাকেন না। অথচ জিনিসপত্র সবই গুছিয়ে রাখা। কোথাও শাকসবজি, কোথাও আবার অন্য কিছু। দোকানে সবই আছে, স্রেফ দোকানি নেই। তাহলে কেউ কিছু কিনতে চাইলে কী করবেন? সে ব্যবস্থাও আছে। দোকানের মধ্যেই রাখা আছে টাকার বাক্স। আর প্রত্যেকতা জিনিসের গায়ে লেখা আছে দাম। ব্যস নিজেদের পছন্দ মতো জিনিস তুলে দাম মিটিয়ে দিলেই হল! কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে সবাই যে সঠিক দাম দিয়েই জিনিস নেবেন এমনটা নাও হতে পারে। সেখানে উঠে আসে সততার প্রসঙ্গ। মিজোরামের অধিকাংশ মানুষই সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করেন। আর যেহেতু উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে তথাকথিত শহুরে ছাপ নেই। তাই তেমনটা করতে খুব একটা অসুবিধায় তাঁরা পরেন না। মেট্রো সিটির বিনোদনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাঁরা নিজেদের মতো করে বাঁচেন। নিজেদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য সবকিছু বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এই সততাও বলতে গেলে সেই ঐতিহ্যের অংশ বিশেষ। বহুকাল আগে থেকেই এখানে দোকানদার ছাড়াই দোকান চালানোর রেওয়াজ রয়েছে। এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ নিজের পছন্দ বা সুবিধামতো জিনিস বেছে নিতে পারেন, তেমনই দোকানের মালিক অন্য কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।
আরও শুনুন: বোন মুসলিম ভাই হিন্দু, মায়ের শেষকৃত্যের রীতি নিয়েই বাধল জোর বিবাদ
তবে সম্প্রতি মিজোরামের এই প্রথা ঘিরে নেটদুনিয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই ব্যবস্থার তারিফ করেছেন। অনেকে আবার এমনটাও বলেছেন, আর কোথাও এই ব্যবস্থা রাখা সম্ভব নয়। সেইসঙ্গে যেসব পর্যটক মিজোরাম ঘুরে এসেছেন, তাঁরাও নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সকলের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, মূলত চাষিরাই এই ধরনের দোকানের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সকালে জমির টাটকা সবজি দোকানে সাজিয়ে রেখে কাজে চলে যান তাঁরা। পরে ফিরে এসে হিসাব বুঝে নেন। কেউ কিছু চুরি করে না। সকলেই জিনিস নেওয়ার পর নির্দিষ্ট জিনিসের দাম মিটিয়ে যান। তাই নেটদুনিয়াকে বেশ মুগ্ধ করেছে এই সততার বাস্তব প্রয়োগ।