আইন মেনে অপরাধীদের শাস্তি দেন তিনি। কিন্তু খোদ সেই বিচারপতিও যে আইনের শাসনের বাইরে নন, তেমনটাই জানায় দেশের শীর্ষ আদালত। আর আইন অমান্য করার দরুনই কলকাতা হাই কোর্টের এক প্রধান বিচারপতিকে কারাবাসের সাজা শুনিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ফের উসকে উঠেছে সেই প্রসঙ্গ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত জোড়া মামলা সরে গিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে একাধিক বড় রায় দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই শিরোনামে উঠে এসেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের এই বিচারপতি। কিন্তু আইনের নির্দেশ মোতাবেকই দুই মামলা থেকে সরে যেতে হয়েছে তাঁকে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এক টিভি চ্যানেলে তাঁর সাক্ষাৎকার দেওয়ার জেরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আর সেই ইস্যুতেই ফের চর্চায় উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের এমনই এক পুরনো সিদ্ধান্তের কথা। যে রায়ে বড়সড় বিপাকে পড়তে হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টেরই আরেক বিচারপতিকে। এমনকি কারাদণ্ড পর্যন্ত ভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে।
কে এই বিচারপতি? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: সমলিঙ্গ বিয়েকে স্বীকার করে না বেদ, ‘সংস্কৃতি’র ধুয়ো তুলে সমকামিতাকে তোপ ধর্মগুরুর
তিনি বিচারপতি সি এস কারনান। ২০১৭ সালে তাঁকে ছয় মাসের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রথমবার এই ধরনের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। শুধু তাই নয়, কারনান-ই প্রথম বিচারপতি, যাঁকে সুপ্রিম কোর্টের তলবে আদালতে হাজিরা দিয়ে হয়েছিল।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিচারপতি কারনান ২০ জন বিচারপতিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তোলেন। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির বেঞ্চ নিজে থেকেই আদালত অবমাননার মামলা শুরু করে। তাঁকে আদালতে তলব করা হয়। কিন্তু প্রথমে সেই তলব এড়িয়ে গিয়েছিলেন কারনান। শেষ পর্যন্ত তাঁর নামে জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরপর ৩১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের সামনে হাজিরা দেন তিনি। তবে তারপরে হাজিরা দেওয়া দূরে থাক, উলটে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদেরই তাঁর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি করেছিলেন এই বিচারপতি। উপরন্তু তফসিলি জাতি-উপজাতি নির্যাতন আইনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এস খের-সহ আট জন বিচারপতিকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তিনি। প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করেন। এই সবকিছুর পর, তিনি শীর্ষ আদালতের অবমাননা করেছেন এই অভিযোগে কারনানকে ছ-মাসের কারাদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কারনানের আচরণে ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, এই রায়ের পরে কারনান কোনও বয়ান বা নির্দেশ দিলে সংবাদমাধ্যমে তা প্রকাশ করা যাবে না।
আরও শুনুন: যন্ত্রণার দৃশ্য! শহিদ জওয়ানের চিতার উপর শুয়ে পড়লেন স্ত্রী, কেঁদে আকুল গোটা গ্রাম
কারনান মামলায় কোনও কোনও আইনজীবী দ্বিধা প্রকাশ করে বলেছিলেন, কোনও কর্মরত বিচারপতির কারাদণ্ড হলে তাতে বিচারবিভাগের গায়ে কলঙ্ক লাগবে। তার উত্তরে প্রধান বিচারপতি সাফ জানিয়ে দেন, আদালতের অবমাননার ক্ষেত্রে দোষী সাধারণ মানুষ না বিচারপতি, তা বিচার করা হবে না। আর তারপরেই সুপ্রিম কোর্টের কড়া পদক্ষেপের মুখে পড়েছিলেন বিচারপতি সি এস কারনান।