তিনি ঈশ্বর। তিনি পৃথিবী। তিনি আমাদের ভালোবাসা। শচীন তেণ্ডুলকর। যে নামের সামনে নতজানু ভারতবাসী। আগেও ছিল, এখনও আছে। গোটা বিশ্ব যে বিস্ময় প্রতিভাকে স্মরণ করে সম্ভ্রমে। তাঁরই ৫০তম জন্মদিনে সংবাদ প্রতিদিন-এর আয়োজন ‘বাহ্ শচীন’। নিরলস সাধনায় যে সাধক দেশকে এনে দিয়েছেন অনন্ত ঐশ্বর্য, তাঁকেই ফিরে ফিরে দেখা স্বজন, সতীর্থদের চোখে। আসুন মেতে উঠি এই শচীন পার্বণে।
অঞ্জলি তেণ্ডুলকর: শচীন আর আমি একে অন্যকে চিনি তেত্রিশ বছর হয়ে গেল। যা কি না ওর জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ। আর এটুকু বলতে পারি যে, শচীন আর আমি মানুষ হিসাবে অনেক জায়গায় একইরকম, যা আমাদের অনায়াস পরিচয়। এটা ঠিক যে, কিছু কিছু জায়গায় আমরা সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা একইরকম মত পোষণ করি।
আরও শুনুন: Sachin@50: কতটা পথ পেরোলে তবে ‘শচীন’ হওয়া যায়?
প্রথমে দু’জনের তফাত নিয়ে বলি। যন্ত্রপাতি বা গ্যাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে শচীন আর আমার ফারাক আছে। নতুন কিছু কিনলে আমি সব কিছু দেখেশুনে নিই, কী লেখা আছে পড়ি, নির্দেশিকা অনুসরণ করি। কিন্তু শচীন সে সমস্তর ধার ধারে না। ও স্রেফ কিনে নিয়ে নিজের মতো করে সেটা চালাতে শুরু করে দেয়। চিরকাল ও এরকমই। কিন্তু যখন জীবনশিক্ষার বিষয় আসে, মূল্যবোধের ব্যাপার আসে, তখন আমি আর শচীন সবসময় একভাবে ভাবি, একভাবে বিচার করি।
আরও শুনুন: Sachin@50: দেবতাজ্ঞানে যাঁকে ভক্তি করি, তাঁর অধিনায়ক হওয়া ছিল স্বপ্নের মতো
আমরা দু’জনে সম্পূর্ণ ভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আসা। পড়াশোনাগত ভাবেও আমরা আলাদা। কিন্তু তার পরেও আমাদের দু’জনের মূল্যবোধ এক। শচীনের সঙ্গে থাকা মানে সবসময় আপনার ওঠাবসা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, বড় কর্পোরেট লিডার কিংবা অন্যান্য বড় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে হবে। কিন্তু আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব বা স্টাফদের সঙ্গে যেভাবে মিশি, আচরণ করি, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও করি। কেউ যদি আমাদের বাড়িতে আসেন, তিনি আমাদের অতিথি। আর আমাদের কাছে সেটাই একমাত্র গুরুত্ব পায়। আমরা একই কাপে চা খাই, একই উষ্ণতায় সবাইকে একইভাবে আপ্যায়ন করি। আর অভিভাবক হিসাবে আমরা আমাদের সন্তানদের মধ্যেও একই মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের কাছে অর্থ বা সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল, মনুষ্যত্ব।
আরও শুনুন: Sachin@50: স্যরকে দেখব বলে পুলিশের মারও খেয়েছি, শচীন তেণ্ডুলকর আমার ঈশ্বর
শচীন যখন ভারতের হয়ে খেলত, আমি ওকে ‘স্পেস’ দিতাম, নিজের মতো থাকতে দিতাম। টেনশনের মধ্যে থাকলে শচীনের ভেতরে ভেতরে যে কী চলছে, বুঝতে পারতাম আমি। তাই কোনও কিছু নিয়ে ওকে আমি চাপ দিতে যেতাম না। ও কথা বলতে না চাইলে, জোরাজুরি করতাম না আমি। একা ছেড়ে দিতাম। তারপর শচীন কথা শুরু করলে বলতাম, আমার কী মনে হচ্ছে? তারপর আমরা ঠিক করতাম, কী করা উচিত।
আরও শুনুন: Sachin@50: শচীন সর্বোত্তম ক্রিকেট-শিল্পী, ওঁর ব্যাটিং লতা মঙ্গেশকরের গানের মতোই
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন যে, শচীনের পঞ্চাশতম জন্মদিন নিয়ে আমি কী ভাবছি। কী পরিকল্পনা করছি। এটুকু বলতে পারি, বিশাল কোনও পার্টির বন্দোবস্ত করব না। অতটা কৃত্রিম হওয়া সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। আমরা সেরকম নই। হয়তো কাছের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে কিছু একটা করব, কিন্তু এমন কিছু করব না, যার সঙ্গে আমরা নিজেদের মেলাতে পারব না। আর ঠিক সেই ব্যাপারটাই আমাদের আরও সামনে এগোনোর জ্বালানি।