বাড়ছে দূষণ। কমছে গাছের সংখ্যা। জোড়া সংকটে সভ্যতার অস্তিত্ব যে বিপন্ন হতে পারে, এ নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীমহল। আর তা থেকে পরিত্রাণ পেতেই এবার ‘তরল গাছ’ বা ‘লিকুইড ট্রি’ আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। কী এই অভিনব ‘তরল গাছ’? শুনে নিই।
দূষণ-দানব থেকে মানুষের পরিত্রাণ কী উপায়ে? খোঁজ করছে গোটা বিশ্ব। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেভাবে আমাদের কাবু করে ফেলছে, তাতে এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করে উপায় নেই। দূষণ যাতে না বাড়ে সেদিকে যেমন খেয়াল রাখা জরুরি, তেমনই জোর দেওয়া উচিত বৃক্ষরোপণে। এ নিয়ে সকলেই একমত। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। নগর অঞ্চলে বৃক্ষরোপণের সুযোগ বেশ কম। অপরিকল্পিত নগরায়ণের দরুন প্রকৃতির ভারসাম্য গিয়েছে বদলে। ইট-কাঠ-কংক্রিটের জঙ্গল বেড়েছে, কমেছে গাছের সংখ্যা। আবার জনবিস্ফোরণের দরুণ আবাসস্থল যে বাড়বে, তা-ও একরকম অনস্বীকার্য। সংকটের নানা মাত্রা আমাদের ঘিরে ধরেছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই অভিনব উদ্ভাবন একদল বিজ্ঞানীর। আর্বান এরিয়া বা নগরে গাছ লাগানোর সুযোগ না থাকলেও ‘তরল গাছ’ নিয়ন্ত্রণ করবে দূষণ। এমনটাই মত তাঁদের।
আরও শুনুন: নামে নয়, প্রণামেই বড় হয় মানুষ… আপনি আচরি ধর্ম শেখালেন অরিজিৎ
কিন্তু গাছ কি তরল হতে পারে? জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে আমরা জানি বটে। তবে আমাদের চেনা গাছের ধারণার সঙ্গে ‘তরল গাছ’ একেবারেই বেমানান। এখানেই চমক দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই তরল গাছ আসলে কিছুই নয়, জলের মধ্যে মিশে থাকা মাইক্রোঅ্যালগি। সার্বিয়ার বিজ্ঞানীদল জানিয়েছেন, এই মিশ্রণ যদি নির্দিষ্ট পরিমাণে নগর-অঞ্চলে রাখা যায়, তবে তা কার্বনজনিত দূষণ অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। বৃক্ষরোপণের সুযোগ না-থাকলেও, এই ‘তরল গাছ’ বা এই ধরনের অ্যালগি-সহ জলপূর্ণ পাত্র রাখা যায় যে কোনও জায়গাতেই। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ছোট ছোট গাছ যে কাজ করতে পারে না, তা পারে এই মাইক্রোঅ্যালগি। গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে এই ‘তরল গাছ’।
আরও শুনুন: ‘ভগবান কাঁহা হ্যায় রে তু!’ পরীক্ষার খাতায় হিন্দি গান লিখে এল পড়ুয়া
যদিও এ জিনিস কখনোই একটি সত্যিকারের গাছের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না। গাছ তো শুধু অক্সিজেন দেয় তা-ই নয়। গাছকে ঘিরে যেভাবে প্রকৃতির সাম্যবস্থা তৈরি হয়, তা কখনোই এই তরল গাছ-কে ঘিরে তৈরি হতে পারে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি একটি বিকল্প ব্যবস্থা। যে অঞ্চলে, বিশেষত ব্যস্ত শহরে গাছ লাগানো সম্ভব নয়, অথচ দূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে এই বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিবেশ দূষণজনিত সমস্যা মোকাবিলায় স্মার্ট উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। সার্বিয়ার বিজ্ঞানীদের এই বিকল্প ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সমাধান হিসাবে যথেষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছে, কুড়িয়েছে প্রশংসাও।