বিনায়ক দামোদর সাভারকর। ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি যেমন চর্চিত, তেমনই বিতর্কিত। মূলত বিজেপি এবং সংঘ পরিবার তাঁর জীবন ও কর্মের অনুরাগী। আবার স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা নিয়ে তাঁকে সমালোচনার কাঠগোড়াতেও তোলেন বহু মানুষ। সাভারকরের কাজ যাতে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে এবার সে উদ্যোগ নিল বিজেপি, আগামী ২ এপ্রিল গেরুয়া শিবিরের উদ্যোগে হবে বীর সাভারকর যাত্রা।
গান্ধী বনাম সাভারকর! রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ভারতীয় রাজনীতির মতাদর্শগত যে মূল ফারাক তা এই দুই শিবিরেই বিভক্ত। সম্প্রতি সেই বিতর্ক ফের উসকে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। সাংসদ পদ খারিজের পরে যখন তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠল, তিনি সাফ বলে দিলেন, যে তিনি সাভারকর নন, গান্ধী। তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল শিব সেনা। এবার সেই শিব সেনারই শিন্ডেপন্থীরা বিজেপির সঙ্গে একজোট হয়ে আয়োজন করছে ‘বীর সাভারকর যাত্রা’র। উদ্দেশ্য একটাই, আরও ছড়িয়ে পড়ুক সাভারকরের জীবনকীর্তি।
আরও শুনুন: গান্ধী বনাম সাভারকর! আদর্শের বিরোধ ফিরল, নাকি ভোটের ফাঁদেই দেশের রাজনীতি?
সেলুলার জেলে বন্দি থাকাকালীন সাভারকর ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দেন বলেই ঐতিহাসিকরা দাবি করেন। এই নিয়ে বিতর্কও আছে। এই চিঠির দরুন সাভারকরের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তোলেন। আবার তাঁর অনুগামীদের দাবি, যিনি স্বাধীনতার লড়াই লড়ে সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন, তাঁর সংগ্রাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে তাঁকে অপমান করা। সব মিলিয়ে সাভারকর হয়ে উঠেছেন এই সময়ের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র। রাহুল তাঁর মন্তব্যে সাভারকরের এই মুচলেকা প্রসঙ্গই ফিরিয়ে এনেছিলেন। যাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয় শিব সেনা। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এই বিতর্কে সাভারকরকে টেনে আনার কোনও মানে হয় না। আবার, সাভারকরের বংশধরের তরফেও রাহুলের মন্তব্যের বিরোধিতা করা হয়েছিল। রাহুল যদি তাঁর অভিযোগ প্রমাণ না করতে পারেন, তাহলে তঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক মানদা বিজয় মাত্রেও রাহুলের মন্তব্যে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। রাহুল শিশুসুলভ তুলনা টেনেছেন বলেই দাবি ছিল তাঁর। এবার তিনিই উদ্যোগ নিয়েছেন সাভারকরের নামে শোভাযাত্রা বের করার। আগামী ২ এপ্রিল তাঁর কেন্দ্র বেলাপুর থেকে বৈশী শিবাজি মহারাজ চক পর্যন্ত হবে এই শোভাযাত্রা। বিজেপির সঙ্গে এই যাত্রার আয়োজক শিব সেনার শিন্ডেপন্থীরাও। তাঁদের দাবি,বীর সাভারকরে জীবন ও কাজের কথা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়া উচিত। মানুষের জানা উচিত তাঁর কাজের কথা। তাই এই যাত্রার আয়োজন বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা। সাভারকরের জীবনগৌরব তুলে ধরতে থাকছে প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও। মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামে সাভারকরের ভূমিকা তুলে ধরতেই এই আয়োজন। রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের পর এই যাত্রার আয়োজন রাজনৈতিক ভাবেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক বিতর্ককে যে মূল কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন রাহুল, সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতেই সাভারকর যাত্রা জরুরি হয়ে পড়েছে বিজেপির কাছে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই।