মন্দির ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। কিন্তু মন্দিরের সামনে দাঁড়াতেই তাঁর হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল তলোয়ার। ঘটে বজ্রপাতের মতো ঘটনা আর দৈববাণী শুনে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল মোঘল সেনা- এমনই গল্প ঘিরে আছে হায়দরাবাদের এক হুনুমান মন্দিরকে ঘিরে। আসুন শুনে নিই সেই গল্প।
দেশ জুড়ে বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এর ঐতিহাসিক সত্যতা আছে বলেও অনেকেই স্বীকার করেন। কিন্তু শোনা যায়, চেষ্টা করেও দক্ষিণের এক হনুমান মন্দিরে আঁচড়টুকুও কাটতে পারেননি তিনি। বরং ভয় পেয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন সেখান থেকে। ভক্তদের বিশ্বাস, স্বয়ং হনুমান এই মন্দিরে থাকেন। তিনিই এতদিন ধরে রক্ষা করছেন এই মন্দির।
আরও শুনুন: শিবসেনার গড়ে ঔরঙ্গজেবের ছবি নিয়ে মিছিল, যুবকদের কীর্তিতে অবাক পুলিশ
কথা বলছি, হায়দরাবাদের কারমানঘাট মন্দির নিয়ে। সমগ্র দক্ষিণ ভারতেই এই মন্দির যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। আর হবে না ই বা কেন! কথিত আছে, স্বয়ং হনুমান নিজে এই মন্দির মোঘল আক্রমণ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক ঠিক কতদিন আগে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল।
আনুমানিক ১২ শতকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দক্ষিণ ভারতের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় প্রলা। মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়েও প্রচলিত রয়েছে এক কাহিনি। বলা হয়, কাকাতিয়া বংশের এই রাজা একদিন শিকারে গিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেদিন তিনি নাকি বনের মধ্যে রাম নাম শুনতে পান। শব্দ শুনে এগিয়ে যেতেই আবিষ্কার করেন গাছের নীচে রাখা আছে ধ্যানরত হনুমান মূর্তি। করজোড়ে সেই মুর্তিকে প্রণাম করে রাজা ফিরে আসেন। এদিকে সেদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে হনুমানের আদেশ পান। কথিত আছে, রাজাকে স্বপ্ন দিয়ে স্বয়ং হনুমান বলেছিলেন বনের মধ্যে থেকে ওই মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেই আদেশ মেনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় মন্দিরের। অসাধারণ ভাষ্কর্যের দরুন সকলের নজর কাড়ত এই মন্দির। তবে এমন স্বপ্নাদিষ্ট মন্দিরের সংখ্যা তো নেহাতই কম নয়। তাই এই হনুমান মন্দিরের আলাদা কোনও বিশেষত্ব ছিল না। মন্দিরের আসল পরিচিতি বাড়ল মোঘল আমলে।
সে সময় দেশ জুড়ে শাসন করছেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। ইতিহাসবিদদের একাংশ বলেন, ইসলাম ব্যতীত অন্যধর্মের প্রতি বিদ্বেষের জেরে তিনি তখন ধ্বংস করে চলেছেন একের পর এক হিন্দু মন্দির। গোটা দেশ তাঁর অত্যাচারে তটস্থ। এমনই একদিন ঔরঙ্গজেবের নজর পড়ল দক্ষিণের ওই স্বপ্নাদিষ্ট হনুমান মন্দিরের দিকে। ঠিক করেন, অন্যান্য মন্দিরের মতো এই মন্দিরও নিজে হাতে ধ্বংস করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বেরিয়ে পড়েন বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে। সেই সময় তাঁকে বাধা দেওয়ার সাহস কোনও সাধারণ মানুষের ছিল না। সকলে এক প্রকার ধরেই নিয়েছিল এই মন্দিরও ধ্বংস হবে। কিন্তু না। তেমনটা হতে দেননি মন্দিরের আরাধ্য দেবতা হনুমান।
আরও শুনুন: বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরাই কাল হল, একসঙ্গে ৪৫টি আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে মৃত্যু ছাত্রীর
কথিত আছে, ঔরঙ্গজেব মন্দিরের সামনে দাঁড়াতেই চারিদিকের পরিবেশ নিমেষে বদলে যায়। আর তিনি তলোয়ার তুলে ধরতেই ভয়ানক শব্দ করে বাজ পড়ে মন্দির চত্বরে। আচমকা এই আওয়াজে ভয় পেয়ে যায় সেখানে উপস্থিত সকলেই। এরপরই নাকি মন্দিরের ভিতর থেকে ভেসে আসে দৈববাণী। যা শোনার পর ভয় পেয়েছিলেন স্বয়ং মোঘল সম্রাটও। তখনই সৈন্য সামন্ত নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। তারপর থেকেই এই অদ্ভুত ঘটনার কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পরে। সকলেই বিশ্বাস করেন সেদিন স্বয়ং পবনপুত্র মন্দির রক্ষা করেছিলেন। এবং এখনও তিনি মন্দিরের ভিতরই বিরাজমান। শুধু হনুমান নয়, মন্দিরে রয়েছে একাধিক হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি। নিত্য পুজো হয় শ্রীরামচন্দ্র, মা সীতা ও মহাদেবের। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসে ভিড় জমান এই মন্দিরে। প্রভুর কাছে নিজের মনের ইচ্ছা করজোড়ে জানিয়ে যান সকলেই। বহুকাল পেরিয়ে এসে প্রাচীন জনশ্রুতিতে ভর করে আজও টিকে আছে এই মন্দির। মন্দিরকে ঘিরে জন্ম নেওয়া গল্পের ভিতর ঐতিহাসিক সত্যতা কতখানি আছে, তা তর্কযোগ্য। তবে অনুগামীদের বিশ্বাস আর ভক্তিতে এখনও অম্লান মন্দিরে এই দৈব মহিমা।