২৫ বছরের গৃহশ্রমের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম মজুরির হিসেব ধরেও টাকার অঙ্ক পৌঁছে গিয়েছে কোটিতে। এক ব্যক্তিকে এই পরিমাণ টাকাই মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্পেনের আদালত। প্রাক্তন স্ত্রীর গৃহশ্রমের মজুরি হিসেবেই ওই টাকা দিতে হবে তাঁকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে আগেই। এবার যৌথ সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাওয়ার পালা। অর্থাৎ যিনি যা অর্জন করেছেন, সেই অংশে আর অন্যজনের কোনও মালিকানা থাকবে না। এমনটাই নিয়ম। কিন্তু এই দম্পতির ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটা ঘটেনি। কারণ এখানে মহিলা কোনও পেশায় নিযুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ আর্থিকভাবে তিনি স্বাবলম্বী নন। আর সেই কারণেই বাড়ির কোনও স্থাবর সম্পত্তি তাঁর নিজের অর্থে কেনা নয়। তাই, এতদিন যা কিছুকে তিনি নিজের বলে ভেবে এসেছেন, সেসবের পরিচর্যা করেছেন, তার কোনও কিছুর উপরেই আর অধিকার বর্তায়নি তাঁর। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেই নজিরবিহীন রায় জানিয়েছে আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণ, অর্থনৈতিকভাবে সংসারে কোনও অবদান হয়তো রাখেননি ওই মহিলা। তবে এত বছর ধরে সংসারে তিনি যে গার্হস্থ্য শ্রম দিয়েছেন, তার মূল্যও কিন্তু কম নয়। আর তাই, দীর্ঘ ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে পরিবারের জন্য যে শ্রম দিয়েছেন ওই মহিলা, তারই মূল্য নির্ধারণ করেছে আদালত। আর প্রাক্তন স্ত্রীকে ওই মূল্য চুকিয়ে দিতে হবে বলেই তাঁর স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সম্প্রতি এক মামলার রায়ে এমনটাই ঘটেছে স্পেনের এক আদালতে। আদালত সাফ জানিয়েছে, প্রায় ২ লক্ষ ১৯ হাজার ডলার, অর্থাৎ ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি অঙ্ক মিটিয়ে দিতে হবে ওই ব্যক্তিকে। তাঁদের দাম্পত্যের সময় জুড়ে তাঁদের পরিবারে সর্বনিম্ন যা খরচ ছিল, তার ভিত্তিতেই ওই টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও শুনুন: ৭৮ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তি, ডিগ্রি পেতেই জড়িয়ে ধরলেন ৯৮ বছর বয়সি মা
“গৃহশ্রমে মজুরি নেই বলে/ মেয়েরা কেবল বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে?”- শ্রমের মূল্যের প্রবক্তা কার্ল মার্কসের উদ্দেশে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন এক মহিলা কবি, মল্লিকা সেনগুপ্ত। আসলে গৃহশ্রমের পিছনে জীবনের অনেকখানি সময় ব্যয় করে ফেলতে হয় অধিকাংশ মহিলাকেই। কিন্তু সামাজিক বিচারে যে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে দিনের শেষে অর্থনৈতিক ক্ষমতাই সবার উপরে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু গৃহশ্রমের যেহেতু কোনও আর্থিক মূল্য এখনও অব্দি ধার্য করা হয়নি, ফলে অনেকের কাছেই সেই কাজের গুরুত্ব নেই। আর তাই বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় অধিকাংশ গৃহবধূকেই। এই বিশেষ মামলাটিতেও দেখা গিয়েছে, স্বামীর আপত্তিতেই চাকরি করতে পারেননি ওই মহিলা। যদিও স্বামীর ব্যবসার বিভিন্ন কাজ করে দিতেন তিনি। তবে তা সত্ত্বেও ডিভোর্সের পর দেখা যায় তিনি কার্যত নিঃস্ব। এই অবস্থায় আদালতের এই রায়কে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন নেটিজেনরা।