বিরোধী রাজনীতির ভিত্তিতে নয়, স্রেফ জাতপাতের নিরিখে ভোট দেওয়ার আরজি জানালেন এক রাজনৈতিক নেতা। হ্যাঁ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঠিক এমনটাই ঘটেছে কর্ণাটকে। কোনও মুসলিম প্রার্থীকে যেন ভোট দেওয়া না হয়, এই মর্মেই কার্যত ফতোয়া জারি করেছেন এক বিজেপি বিধায়ক। মুসলিমরা টিপু সুলতানের অনুগামী বলেও তোপ দেগেছেন ওই নেতা। ঠিক কী বলেছেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক।
কোনও মুসলিম প্রার্থীকে ভোট দেওয়া চলবে না। প্রকাশ্য জনসভা থেকে এই মর্মেই ফতোয়া জারি করে বসেছেন কর্ণাটকের এক বিজেপি বিধায়ক। ভোটের প্রচারে গিয়ে বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ার আরজি জানান কমবেশি সব রাজনৈতিক নেতাই। কিন্তু সেই দাবির ভিত্তি মূলত রাজনীতি। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধিতার দাবিতে নয়, স্রেফ জাতপাতের নিরিখেই ভোটদানের আরজি জানিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা। আর নিজের এই দাবির জোর বাড়াতেই ফের টিপু সুলতানকে হাতিয়ার করেছেন বাসনাগৌড় পাটিল যাতনাল নামের ওই নেতা।
আরও শুনুন: চলছিল ডিভোর্সের ঝামেলা, জঙ্গি বলে ফাঁসানোর চেষ্টা চিনা স্ত্রী-র, যুবকের দাবিতে চাঞ্চল্য
সম্প্রতি এক জনসভায় দাঁড়িয়ে কর্ণাটক বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ নলিনকুমার কটীল বলেছিলেন, ‘‘কর্ণাটকের পবিত্র মাটিতে টিপু সুলতানের অনুগামীদের বেঁচে থাকাই উচিত নয়।’’ যারা টিপুকে পছন্দ করে, তাদের এ দেশ থেকে বিদায় করার ডাক দেন তিনি। তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কন্নড় রাজনীতিতে। আর এবার তাঁর সুরেই সুর মেলালেন বিজেপি শিবিরের এই বিধায়ক। তাঁর কথায়, “আমাকে সকলে প্রশ্ন করে, বিজাপুর কেন্দ্রে এক লক্ষ টিপু সুলতান থাকার পরেও সেখানে শিবাজি মহারাজের কোনও অনুগামী কীভাবে জিততে পারে?” স্পষ্টতই, মুসলিম ভোটারদের টিপু সুলতান বলে দাগিয়ে দিয়ে আসলে তাঁদের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়েছেন ওই বিধায়ক। তাঁর আরও দাবি, ভবিষ্যতে টিপু সুলতানের কোনও অনুগামীই জিতবে না। আর এরপরেই জনতার উদ্দেশে তাঁর বার্তা, যেন ভুল করেও কেউ কোনও মুসলিম প্রার্থীকে ভোট না দেন। যদিও কংগ্রেসের তরফে এই মন্তব্যের পালটা দিয়েছেন হাত শিবিরের বিধায়ক প্রিয়াঙ্কা খাড়গে।
আরও শুনুন: ‘পাকিস্তানে ভারতীয় সংস্কৃতি চলবে না’, বিয়েতে লেহঙ্গা পরায় তোপের মুখে পাক অভিনেত্রী
ধর্মের ইস্যু নিয়ে বিবাদ বিতর্কের জেরে বারেবারেই উত্তাল হয়ে উঠছে কর্ণাটক। হিজাব ইস্যু নিয়ে তোলপাড়ের পর এবার সে তালিকায় নয়া সংযোজন টিপু সুলতান। অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের আগে কর্ণাটক রাজনীতিতে মেরুকরণের জন্য এবার অষ্টাদশ শতকের মাইসুরুর (মহীশূর) সম্রাটকেই হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির। ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে একাধিকবার যুদ্ধে নেমেছিলেন টিপু সুলতান, এমনকি তাতে শহিদও হন তিনি। কিন্তু বিজেপির চোখে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শহিদ টিপু আসলে ‘হিন্দু-হত্যাকারী’। শ্রীরঙ্গপত্তনমে টিপুর মসজিদ আদতে মন্দির ভেঙে গড়া বলেও হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ। আর এইভাবেই কর্ণাটকের রাজনীতিতে বরাবরই বিজেপির মেরুকরণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছেন টিপু সুলতান। বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে ফের সেই ইস্যুকেই সামনে তুলে এনেছে গেরুয়া শিবির। সুপ্রিম কোর্ট যতই রাজনৈতিক নেতাদের ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে সওয়াল করুক না কেন, টিপু সুলতানের নাম তুলে বারবার মুসলিম সম্প্রদায়ের দিকে তোপ দেগে সে কথাই প্রমাণ করে দিচ্ছে বিজেপি।