শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে শিব সেজে ‘শিবতাণ্ডব’ নৃত্য পরিবেশন করলেন এক মুসলিম তরুণী। পরিবারের আপত্তি, সমাজের কটাক্ষ, এতশত বাধা কাটিয়েও বিভিন্ন জায়গায় এই বিশেষ নৃত্যশৈলী পরিবেশন করে চলেছেন তিনি। শিল্পের মধ্যে যে জাত ধর্মের বেড়া টানা চলে না, সে কথাই যেন ফের মনে করিয়ে দিল গুজরাটের এই ঘটনা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথায় আছে, শিল্পীর কোনও জাত বা ধর্ম হয় না। তাঁর একটাই পরিচয়, তিনি শিল্পী। ফের যেন সেকথাই প্রমাণ করে দিলেন গুজরাটের এক মুসলিম পড়ুয়া, রেভা আব্দেল নাসের। শিবরাত্রির অনুষ্ঠানে শিবের বেশে তিনি পরিবেশন করলেন ‘শিবতাণ্ডব’ নামের বিশেষ নৃত্যরীতি। আর শুধু এবারেই প্রথম নয়, বিভিন্ন জায়গায় বারেবারেই এই অনুষ্ঠানটি করে আসছেন তিনি। কোনও ধর্মপরিচয়কে সেখানে বাধা হয়ে উঠতে দেননি এই শিল্পী।
আরও শুনুন: বোরখা পরে কলেজে ঢুকতে বাধা মুসলিম ছাত্রীদের, উঠল বোরখাকেও ‘ইউনিফর্ম’ করার দাবি
মনে করা হয়, এই বিশেষ নৃত্যরীতির স্রষ্টা স্বয়ং মহেশ্বর। পুরাণ মতে, ভয়ংকর ক্রোধের সময়, বিশেষত সতীর দেহত্যাগের পর শিব তাণ্ডব নাচ শুরু করেন। তাই এই নৃত্যরীতি জুড়েই রয়েছে সেই তেজের প্রকাশ। এই নাচ করতে গেলে শিল্পীকেও শিব সাজতে হয়। কপালে তিলক। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। মাথায় জটা। নাচের পোশাকও শিবের পরনের বাঘের চামড়ার মতো। শিবতাণ্ডবের এক স্তোত্রের তালে তালে, ডমরুজাতীয় কোনও বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনির সঙ্গে এই নাচ পরিবেশন করেন শিল্পী। আর সেই কঠিন নৃত্যশৈলীতেই দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন এই তরুণী।
আরও শুনুন: প্রেমে প্রত্যাখ্যান, মুসলিম তরুণীকে ৩৫ টুকরো করে কাটার হুমকি হিন্দু যুবকের
যদিও এই কাজটা একেবারেই সহজ ছিল না। তাঁর বাড়ি থেকে রীতিমতো আপত্তি উঠেছিল এই নাচ পরিবেশনের ব্যাপারে। জন্মসূত্রে মিশরের মুসলিম পরিবারের সন্তান এই তরুণী। কিন্তু চার বছর ধরেই তিনি গুজরাটের বাসিন্দা। সেখানকার বরোদা মহারাজা সয়াজিরাও ইউনিভার্সিটিতে পারফর্মিং আর্টস বিভাগে পড়াশোনা চালাচ্ছেন এই তরুণী। নাচকেই নিজের জীবনের সাধনা করে তুলেছেন তিনি। সামাজিক পরিচয় যাই হোক, তিনি নিজেকে শুধুমাত্র একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেই দেখেন। নাচের স্বার্থে পরিবারের বিরুদ্ধে যেতেও রাজি নাসের। হিন্দুধর্মের প্রধান দেবতাদের অন্যতম শিবের আদলে তিনি সাজবেন, ধর্মীয় স্তোত্রের সঙ্গেই নাচবেন, এমন কাজে কড়া নিষেধ ছিল ওই তরুণীর বাবার। সমাজ কোনও প্রশ্ন তোলার আগেই নাসেরকে বাধা দিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। অবশ্য তাঁর কাজে সমর্থন জুগিয়েছিলেন তাঁর মা। কিন্তু নাচের প্রতি ভালোবাসার টানে যে কোনও মূল্য দিতে রাজি এই তরুণী। তাই কেবল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই নয়, আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানেও এই নাচ পরিবেশন করেছেন তিনি। কুড়িয়ে নিয়েছেন প্রভূত প্রশংসা। আর এইভাবেই শিল্পের আঙিনায় জাতপাতের গণ্ডি টানার অভ্যাসকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই তরুণী।