হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, তাই সেখানে মুসলিম ব্যক্তিকে দোকান বিক্রি করা যাবে না। এই মর্মেই আরজি জমা পড়েছিল আদালতের কাছে। আদালতের নির্দেশে উলটে জরিমানার মুখে পড়লেন মামলাকারীরাই। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রবাদে বলা হয়, অন্যের যাত্রাভঙ্গ করতে গেলে নিজের নাকটিও কাটা যেতে পারে। কিন্তু সে কথা অনেকেরই মনে থাকে না এমনিতে। তবে প্রায় তেমনটাই ঘটেছে গুজরাটের এই সাম্প্রতিক ঘটনার ক্ষেত্রে। বড়সড় কোনও বিষয় নয়, একটি দোকান বিক্রি করা নিয়েই শুরু হয়েছিল তরজা। আর সেই ঝামেলার জল গড়িয়েছিল রীতিমতো হাই কোর্ট পর্যন্ত। কিন্তু আদালতে গিয়ে উলটে সমস্যায় পড়লেন মামলাকারীরাই। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম ব্যক্তিকে দোকান বিক্রি করা যাবে না, এই ছিল তাঁদের দাবি। কিন্তু গোড়াতেই সে দাবি নাকচ করে দিয়েছে আদালত। উপরন্তু, বড় অঙ্কের জরিমানাও দিতে হবে ওই ব্যক্তিদের, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জাতপাত টেনে অন্যকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে আদতে ঘটেছে উলটো ঘটনাই।
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: ধর্মীয় মেলায় ব্যবসা নয় মুসলিমদের, বয়কটের দাবিতে কর্ণাটকে সরব হিন্দুত্ববাদীরা
গুজরাটের ভাদোদরা অঞ্চলে একটি দোকান কিনেছিলেন এক মুসলিম ব্যক্তি। ঘটনাচক্রে ওই এলাকার বাসিন্দারা অধিকাংশই হিন্দু। আর তাঁদের একাংশেরই বড়সড় আপত্তি ছিল এই কেনাবেচা নিয়ে। ইদানীং কালে অনেক সামাজিক ব্যাপারেই এহেন জাতপাতের বৈষম্যের ছবি সামনে আসতে দেখা গিয়েছে। সে ঘর ভাড়া পাওয়াই হোক, কিংবা ভিনধর্মের কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোই হোক। কিছুদিন আগেই ধর্মীয় মেলাতে মুসলিম ব্যবসায়ীদের বয়কটের ডাক দিয়েছিল কর্ণাটকের একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। আর তেমনই ঘটনার রেশ দেখা গিয়েছে গুজরাটের এই ঘটনার ক্ষেত্রেও। যদিও ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের পারস্পরিক সম্মতিতেই এই লেনদেন সম্পন্ন হয়েছিল, তবুও সে ঘটনা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এমনকি ওই এলাকার জেলাশাসকেরও মতে, এহেন কেনাবেচার দরুন অঞ্চলের সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে না, আর তার ফলে অশান্তি ছড়াতে পারে। আর সেই কথার ভিত্তিতেই এই বিক্রিকে নাকচ করার জন্য গুজরাট হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন দশজন বাসিন্দা।
আরও শুনুন: মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ৮০ বছরের বাধা উড়িয়ে তামিলনাড়ুতে পুজো ২০০ দলিতের
কিন্তু মামলার শুনানিতে মামলাকারীদের এহেন দাবি স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণব। ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনেরই যেখানে সম্মতি রয়েছে, সেখানে আদালতের কিছু বলার নেই বলেই সাফ জানিয়েছেন তিনি। উলটে সব নিয়মকানুন মেনে দোকানটি কেনার পরেও কেবল মুসলিম হওয়ার দরুন ওই ব্যক্তিকে যে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তা দুঃখজনক বলেই মত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। এই পরিস্থিতিতে মামলাকারীদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছে গুজরাট হাই কোর্ট। দেখা যাচ্ছে, জাতপাতের ইস্যু টেনে এক ব্যক্তিকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে উলটে বেশ সমস্যায় জড়িয়ে গিয়েছেন ওই মামলাকারী ব্যক্তিরাই।