হাঁটু মুড়ে বসে প্রেমিক। সামনে দাঁড়ানো প্রেমিকার গাল লজ্জায় লাল। এরপরেই ভেসে আসবে সেই তিনটি অমোঘ শব্দ। যা পুরনো হয়েও পুরনো হয় না কিছুতেই। হ্যাঁ, রুপোলি পরদার দৌলতে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার এই দৃশ্য আমাদের সকলেরই চেনা। কিন্তু শুধুমাত্র হাঁটু মুড়ে প্রেম নিবেদনই এত জনপ্রিয় কেন? কী রহস্য লুকিয়ে এমন নিয়মের নেপথ্যে? আসুন, শুনে নিই।
হাঁটু মুড়ে বসে আছেন শাহরুখ খান। উলটোদিক দিয়ে লাল শাড়ি পরে হেঁটে আসছেন সুস্মিতা সেন। অজানা ঝড়ে দুজনেরই চুল উড়ছে। বসে বসেই দুপাশে হাত ছড়িয়ে দিয়েছেন শাহরুখ। হঠাৎ শাহরুখ গেয়ে উঠলেন, ‘চাঁদ মেরা দিল, চাঁদনি হো তুম’। কী, মনে পড়ে গেল তো ‘ম্যায় হু না’-র সেই বিখ্যাত দৃশ্যের কথা? যদিও সে দৃশ্যে ঠিক প্রেম নিবেদন হয়নি। তবে হাঁটু মুড়ে কেউ প্রেম নিবেদন করছেন এমনটা ভাবতে গেলে এই দৃশ্যের কথা সহজেই মনে পড়ে যায়।
আরও শুনুন: বউ চাই শীঘ্র! পদযাত্রা করে খোদ ঈশ্বরের কাছে দরবার শতাধিক অবিবাহিত যুবকের
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রেম নিবেদনের এমন রীতি চালু হল কোথা থেকে?
সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের উলটে দেখতে হবে ইতিহাসের পাতা। যার থেকে জানা যায়, হাঁটু মুড়ে বসে প্রেম প্রস্তাব দেওয়ার রীতি এসেছে মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকেই। ভিক্টোরিয়ান যুগের সমাজে মেনে চলতে হত সৌজন্য প্রকাশের হাজারও খুঁটিনাটি। রাজারাজড়াদের সামনে মাথা তুলে কথা বলার অধিকারটুকু ছিল না সাধারণ মানুষের। রাজদরবারে হোক বা রাস্তাঘাটে, রাজপরিবারের কাউকে দেখলেই বিশেষ কিছু ভঙ্গিতে জানাতে হত সম্মান। আর তার মধ্যেই পড়ত হাঁটু মুড়ে বসে সম্মান জানানোর প্রথা। বিশেষ করে অভিজাত নারীদের সামনে এভাবেই শিভ্যালরি প্রকাশ করত মধ্যযুগের যোদ্ধারা। অন্যদিকে কোনও যুদ্ধে জিতে ফেরার পর মনের মানুষকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই রেওয়াজ বজায় রাখতেন সৈনিকরা। সেই থেকেই এর শুরু। তবে সৈনিক ছাড়া, সাধারণ পুরুষরাও পছন্দের মানুষটিকে এইভাবেই প্রেম নিবেদন করতেন। ধীরে ধীরে সেই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বেই। আবার প্রাচীন যুগে প্রজা কিংবা রাজদরবারের কোনও বন্দিকেও হাঁটু মুড়ে বশ্যতা প্রদর্শনে বাধ্য করা হত। অনেকসময় তেমন নিয়ম খাটত উপনিবেশের মানুষের ক্ষেত্রেও। হয়তো সেই বশ্যতার কথা মনে রেখেই ভালবাসার নারীর কাছে হাঁটু মুড়ে বসতেন প্রেমিক পুরুষেরা। আশ্বাস দিতেন, সেই নারীর একান্ত অনুগত হয়ে থাকার। আর সেই চলই মান্যতা পেয়ে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে একপ্রকার ধরেই নেওয়া হয়, প্রেম কিংবা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এই ভঙ্গিটিই।