ভ্যালেনটান্স ডে হয়ে উঠবে ‘গরু-আলিঙ্গন দিবস’। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রাস্তায় নেমে গরুকেই করতে হবে আলিঙ্গন। এমনটাই ফরমান কেন্দ্রীয় মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রকের আওতাধীন প্রাণী কল্যাণ বোর্ডের। যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা এই মুহূর্তে নেটদুনিয়ায়, চলছে মজা-মশকরাও। কিন্তু প্রশ্ন হল, মানুষের আলিঙ্গনে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া হয় পোষ্যর? গবেষকরা খুঁজেছেন এ প্রশ্নের উত্তরও। আসুন শুনে নিই।
গরুকে আলিঙ্গন করেই পালিত হবে প্রেমের দিন। এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা জাতীয়তাবাদের যে ধারণাই থাক না কেন, ব্যাপারটা পশুদের দিক থেকেও ভেবে দেখার মতো। মানুষ তো নয় গরুকে মাতা কিংবা কন্যা জ্ঞানে পুজো করে। ভালবাসে। কিন্তু মানুষের আলিঙ্গন কি গরুদেরও সমান তৃপ্তি দেবে? প্রশ্নখানা বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এই মুহূর্তে।
আরও শুনুন: ধুমধাম করে অন্তঃসত্ত্বা গাভীর সাধভক্ষণের আয়োজন, আশীর্বাদ নিতে নামল মানুষের ঢল
মানুষের আলিঙ্গনে পোষ্যদের প্রতিক্রিয়া কীরকম হয়, তা নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। তবে তা গরুর উপর নয়, মূলত কুকুকের উপর। ফোর্বস-এ প্রকাশিত এক গবেষণার রিপোর্ট এ বিষয়ে আলোকপাত করেছিল। ৩৬টি বিভিন্ন প্রজাতির কুকুরের উপর প্রাথমিক একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকরা। কয়েকটি বিষয় সেখানে খতিয়ে দেখা হয়েছিল। যদি মালিক পোষ্যের সামনেই কোনও সফট-টয়কে আলিঙ্গন করে, তাহলে পোষ্যের মনের অবস্থা কী হয়? কিংবা পোষ্যকে ছেড়ে যদি বইয়ের প্রতি মনোযোগী হন, তাহলেই বা কী প্রতিক্রিয়া হয় পোষ্যের? দেখা গিয়েছিল, মালিক যদি সফট-টয়কে আদর করে, তাহলে ৭৮ শতাংশ কুকুরই মালিকের কাছাকাছি আসার বা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। অন্যদিকে, মালিক বইয়ে মন দিলে, ২২ শতাংশ কুকুর বেশ বিমর্ষ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মালিকের মন না-পাওয়ার একটা দুঃখ পোষ্যের মনে থেকেই যায়। কিন্তু আলিঙ্গন কি এক্ষেত্রে কাম্য? অন্যান্য গবেষণা কিন্তু বলছে, মানুষ যেভাবে আলিঙ্গন পছন্দ করে, কুকুররা তা করে না। মানুষ যখন পোষ্য কুকুরকে আলিঙ্গন করে, তখন তাদের অবস্থাটা অনেকটা বাচ্চাদের মতো হয়। যাদের বয়স্ক আত্মীয়রা জোর করে গাল টিপে আদর করে, পছন্দ না করলেও, তারা কিছু বলতে পারে না। অতএব সহ্য করে নেয়। সোজা কথায়, পোষ্য মালিককে যথেষ্ট ভালবাসলেও, আলিঙ্গন তাদের না-পসন্দ। অনেকসময় তারা মনে করে যে, এই বুঝি বন্দি হয়ে যাচ্ছে! ফলে মালিকের বা মানুষের বাহুপাশ থেকে তারা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। তাদের বিরক্ত দেখায় এই সব মুহূর্তে।
আরও শুনুন: বিস্ময় বালক! মাত্র ৯ বছর বয়সেই গ্র্যাজুয়েট, গিনেস বুকে নাম উঠল খুদের
আর গরুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কীরকম দাঁড়াবে? পশুদের ব্যবহার বা আচরণ নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা কিন্তু এই আলিঙ্গনের বিষয়টি নিয়ে একরকম শঙ্কিতই। কেননা গরুরা এরকম ব্যাপারে অভ্যস্ত নয়। ফলত হঠাৎ করে তাদের আলিঙ্গন করা মানে, তারা নতুন একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। তাতে তারা ভয় পেতে পারে। আর আলিঙ্গনের বহর যদি বাড়ে, তবে গরুরা অ্যাগ্রেসিভও হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই শঙ্কা তাঁদের।
অতএব প্রেমদিবসে চাইলে কেন্দ্রীয় ফরমান মেনে কেউ গো-আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতেই পারেন। তবে তাতে গরুরাও যে খুব তৃপ্তি পাবে, এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বরং সাবধানের যে মার নেই, সে কথা বরং মনে রাখাই শ্রেয়।