শাস্ত্রে নেই জাতিভেদ, ঈশ্বরের সামনে সব মানুষই সমান। দাবি সংঘ প্রধান মোহন ভাগবতের। জাতিভেদ প্রথা আসলে পুরোহিতদের তৈরি করা বলেও কটাক্ষ তাঁর। ঠিক কী বলেছেন মোহন ভাগবত? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঈশ্বরের কাছে সকলেই সমান। সেখানে জাতি কিংবা শ্রেণির ভিত্তিতে কোনও ভেদাভেদ নেই। এমনটাই মনে করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি সাফ জানালেন, “শাস্ত্রের নামে অনেক পণ্ডিত যা বলেন, তা আসলে মিথ্যা।” জাতির মধ্যে উঁচু নিচু ভেদাভেদ করার কথা শাস্ত্রে বলা হয়নি, তা আসলে পুরোহিত শ্রেণির তৈরি করা- এই মর্মে এবার শাস্ত্রব্যবসায়ীদেরই বিঁধলেন মোহন ভাগবত।
আরও শুনুন: ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও ধর্মগুরু ‘পরমাত্মা’ নন, অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে আবেদন খারিজ শীর্ষ আদালতের
কথায় কথায় হিন্দু শাস্ত্রের কথা টেনে আনা আরএসএস-এর অভ্যাস। হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য অনেক সময় অন্য ধর্মের প্রতি আক্রমণ শানাতেও পিছু হটে না সংঘ। কিন্তু এবার যেন ধর্ম প্রসঙ্গেই খানিক উদারনীতির কথাই শোনা গেল সংঘ প্রধান মোহন ভাগবতের মুখে। সন্ত শিরোমণি রোহিদাস-এর ৬৪৭ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে মুম্বইয়ের রবীন্দ্র নাট্য মন্দিরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী বক্তব্য রাখলেন তিনি। সেখানেই জাতপাতের ভেদাভেদকে সরিয়ে রেখে মানবতার কথা বললেন সংঘ প্রধান। তুলসীদাস, কবীর, সুরদাসের মতো ধর্মপ্রচারকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাঁদের মতোই সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছিলেন সন্ত শিরোমণি রোহিদাস। শুনিয়েছিলেন সত্য, সংবেদন, পবিত্রতা এবং নিরন্তর কঠোর পরিশ্রমের মন্ত্র। শাস্ত্রের বিচারে ব্রাহ্মণদের হারানো তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না, কিন্তু সাধারণ মানুষকে ঈশ্বরের অভিমুখী করে তুলতে পেরেছিলেন তিনি, এমনটাই মত ভাগবতের। আর এরপরেই শাস্ত্রবিদদের একাংশকে নিশানা করেন তিনি। তাঁর সাফ দাবি, আমরা যে যাই কাজ করি না কেন, সবকিছুই সমাজের উপকার করে। আর সেই বিচারে কোনও কাজের ছোট বড় হয় না। তাহলে মানুষের মধ্যেই বা বৈষম্য থাকবে কেন, এই প্রশ্ন তুলেছেন সংঘ প্রধান। এর জবাবেই তাঁর সাফ দাবি, আসলে এইসব ভেদাভেদের মূল হোতা পুরোহিত কিংবা শাস্ত্রব্যবসায়ীরা।
আরও শুনুন: মদের দোকানে হাজির গরু! ‘গো-মাতা’কে সামনে রেখেই অভিনব প্রচার বিজেপি নেত্রীর
সর্বদা ‘হিন্দুত্বে’র হয়ে সওয়াল করা ভাগবতের এহেন বক্তব্যকে ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। আবার কারও মতে, এই বক্তব্য আসলে রাজনৈতিক চাল ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে শাস্ত্রব্যবসায়ীদের বিঁধলেও কোনও পরিস্থিতিতেই যে নিজের ধর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়, নিজের বক্তব্যে সে কথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত।