সম্পদের সঙ্গে স্থূলকায়ত্বের একটা সম্পর্ক আছে। অনেকেই এরকমটা বিশ্বাস করে। কিন্তু কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। সেই তর্ক জমাতে গেলে হাতে থাকা চাই তথ্য। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা তথ্য দিয়েই জানাচ্ছে যে, ভারতের মতো দেশে ধনীরাই বেশি ভুগছেন ওবেসিটিতে। আর সেই সমস্যার মূল ভুক্তভোগী হলেন মহিলারাই। ঠিক কী এর কারণ?
ভারতবর্ষে বাড়ছে ওবেসিটির সমস্যা। আর সেই সমস্যায় বেশি ভুগছেন মহিলারাই। দেখা যাচ্ছে, যাঁদের হাতে সম্পদ আছে, অর্থাৎ যাঁরা যথেষ্ট ধনী, তাদের মধ্যেই স্থূলকায়ত্বের মাত্রা বেশি। সেই প্রবণতাতেও এগিয়ে মহিলারাই। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে-র (National Family Health Survey) তথ্যে মিলল সে ইঙ্গিত।
আরও শুনুন: মাত্র ৬ সেকেন্ডের চুম্বনই সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এই সমীক্ষার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল, তথ্য দিয়ে ওবেসিটির সঙ্গে সম্পদের সম্পর্ক নিরূপণ। স্থূল ব্যক্তি মানেই তিনি যে ওবেসিটির শিকার তা কিন্তু বলা যায় না। কেউ কেউ থাকেন, যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ তাঁরা ‘ওভারওয়েট’ কিন্তু ‘ওবিস’ নন। নিয়ম বলছে, কোনও ব্যক্তির বডি মাস ইন্ডেক্স বা বিএমআই যদি ২৫ থেকে তিরিশের মধ্য়ে হয়, তাহলে তাঁর ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হিসাবেই ধরা হবে। কিন্তু এই মাত্রা যদি তিরিশ পেরিয়ে যায়, তাহলে তা ওবেসিটির পর্যায়ভুক্ত বলেই ধরা হবে। সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য় অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ওবেসিটিতে আক্রান্তের ঘটনা বাড়ছে। আর তা মহিলাদের মধ্য়েই বেশি। পুরুষদের ক্ষেত্রে যেখানে প্রতি ২৫ জনে একজব ওবিস, মহিলাদের ক্ষেত্রে তা প্রতি ১৬ জনে এক জন। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি পুরুষ ও মহিলাদের মধ্য়ে ৬.৪ শতাংশ মহিলা ওবেসিটির শিকার, সেখানে ৪ শতাংশ পুরুষ ভুগছে এই সমস্য়ায়। এই তথ্য় ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্য়ে প্রাপ্ত। আবার অঞ্চল ভেদে এই তথ্য বদলেও যাচ্ছে। যেমন দিল্লির ক্ষেত্রে ১৪.২ শতাংশ মহিলা ওবেসিটির শিকার, সেখানে পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার হার ৭ শতাংশ। গোয়ায় আবার এই আক্রান্তের হার পালটে গিয়ে হচ্ছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে ২.৮ শতাংশ, মহিলাদের ক্ষেত্রে ৯.৫ শতাংশ। পাঞ্জাবে ওবেসিটির হার সর্বোচ্চ, পুরুষ ও নারীদের মধ্য়ে এই হার যথাক্রমে ৮.৩ শতাংশ এবং ১৪.২ শতাংশ।
আরও শুনুন: গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে মহিলাদের সম্পর্কে কী ভাবে পুরুষরা? জানাল সমীক্ষা
তবে এই সমীক্ষার উল্লেখ্য যে পর্যবেক্ষণ হল, সম্পদের সঙ্গে স্থূলকায়ত্বের সম্পর্ক। তথ্য় বলছে, দুটি বিষয় কিন্তু অঙ্গাঙ্গী জড়িত এবং মূলত মহিলারাই এ ব্য়াপারে ভুক্তভোগী। সম্পদের নিরিখে যাঁদের অবস্থান উপরের দিকে, তাঁদের মধ্য়ে ১২.৬ শতাংশ মহিলাই ওবেসিটির শিকার, হিসেবমতো যা প্রতি আট জনে এক জন। একই শ্রেণিভুক্ত পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮ শতাংশ। আরও নানা দিক থেকেই এই বিষটি খতিয়ে দেখেছেন সমীক্ষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক শ্রেণি আর ওবেসিটির এই যে সম্পর্ক তার একটা প্রাথমিক কারণ লক্ষ করা যায়। বাইরের বা কেনা খাবার খাওয়ার প্রবণতা এই শ্রেণির মানুষের মধ্য়ে বেশি। প্রসেসড ফুড এবং সুগার ইনেটেকের দরুন ওবেসিটি বাড়তে পারে। তা ছাড়া এই শ্রেণির মধ্য়ে শারীরিক পরিশ্রম করার সম্ভাবনাও কম। তাও ওবেসিটি ডেকে আনে। আবার বয়সও এখানে একটা ফ্য়াক্টর। মধ্য়বয়স্ক যাঁরা, তাঁরাই অর্থনৈতিক ভাবে বেশি স্বনির্ভর। ফলে নিজের খেয়ালখুশি মতো খাওয়া-দাওয়া করে তারা বেশি, আরামের দিকেও ঝোঁক বেশি। অতএব ওবেসিটি আসতে বাধ্য়। মোদ্দা কথা, লাইফস্টাইলের দরুনই যে এই শ্রেণির মানুষের মধ্য়ে ওবেসিটির প্রবণতা বেশি, তথ্য় দেখে তেমনটাই অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। সার্বিকভাবে, এই সমীক্ষার তথ্য মানুষকে অসুখ থেকে মুক্তিরই রাস্তা দেখাচ্ছে। ধনীদের মধ্য়ে ওবেসিটির হার বেশি হওয়ার এই তথ্য়ই জানিয়ে দিচ্ছে লাইফস্টাইলের বদল কতখানি জরুরি। আর তা শুধু ওজন কমানোরই নয়, সুস্থ থাকারও চাবিকাঠি।