বিয়ের আগে নেড়া হতে হয় কনেকে। তবেই নাকি বিয়েতে রাজি হন পাত্র। শুনতে অবাক লাগলেও আফ্রিকার এক উপজাতির মধ্যে প্রচলিত রয়েছে এমনই অদ্ভুত নিয়ম। সেখানকার কোনও বিবাহিত মহিলার মাথাতেই চুলের লেশমাত্র দেখা যায় না। কিন্তু এমন নিয়মের নেপথ্য-কারণ কী? আসুন, শুনে নিই।
বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে যদি দেখেন কনের মাথায় চুল নেই, তাহলে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিয়ের আসরে সাধারণত মধ্যমণি তো পাত্রীই। বিয়ের দিন কনেকে যেমন বেশভূষায় সাজানো হয়, তেমনই আলাদা আলাদা নজর দেওয়া হয় কনের কেশবিন্যাসে অর্থাৎ হেয়ারস্টাইলে। কিন্তু আফ্রিকার বোরানা উপজাতির বিয়ের নিয়ম জানলে অবাক হবেন প্রায় প্রত্যেকেই। কারণ এই উপজাতির প্রচলিত নিয়ম হল বিয়ের আগে কনের মাথা নেড়া করা।
আরও শুনুন: ২৮ বছরের বিধবা পুত্রবধূকে বিয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ শ্বশুরের, জানাজানি হতেই ছড়াল চাঞ্চল্য
মূলত ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া অঞ্চলে এই বোরানা আদিবাসীদের বাস। ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েও বাকি পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে তাঁদের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে। জানা যায়, তাঁদের সমাজ প্রকটভাবে পুরুষতান্ত্রিক। তাই কনের মাথা নেড়া করা ছাড়াও এমন কিছু নিয়ম এঁদের জীবনে আছে, যা নারী স্বাধীনতাকে বড়সড় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। প্রথমেই আসা যাক এই নেড়া হওয়ার প্রসঙ্গে। এই নেড়া হওয়ার নিয়ম কিন্তু শুধুমাত্র বিবাহিত নারীদের জন্যেই প্রযোজ্য। অবিবাহিতরা মাথার নির্দিষ্ট একটা অংশে চুল রাখার অনুমতি পান। তাহলে বিবাহিত মহিলারা মাথায় চুল রাখেন না কেন? এই গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস এরকমটা যে, নারীর মাথায় চুল থাকলে তিনি স্বামীর ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবেন। এই নিয়মের দরুনই বিয়ের কনেও ভাল বর পাওয়ার আশায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই নেড়া হয়ে যান। কিন্তু এই নিয়মের কোনও বালাই নেই পুরুষদের ক্ষেত্রে। বরং সুঠাম দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বড় চুল রাখাই সেখানে পৌরুষের পরিচয় হিসাবে ধরা হয়। তাই বিয়ের কনে যখন মাথা নেড়া করে বিয়ের আসরে উপস্থিত হন, পাত্র তখন চুলে তেল লাগাতে ব্যস্ত থাকেন। আর এতে অবাক না হয়ে আনন্দিতই হন পাত্রী। কেননা ছোটবেলা থেকেই তাঁদের শেখানো হয়, নারী হয়ে জন্মানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ঘরসংসার করা। কীভাবে ঘর সামলাতে হয়, স্বামীর যত্ন নিতে হয় এইসব শেখাই তাঁদের একমাত্র কাজ। এখানেই শেষ নয়। এই উপজাতির পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহের চলও বর্তমান। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একাধিক সতীনের সঙ্গেই ঘর করতে হয় এখানকার মহিলাদের।
আরও শুনুন: বাবা পাকিস্তানি আর মা বাংলাদেশি, সন্তানের নাম তবু রাখতেই হল ‘ইন্ডিয়া’, নেপথ্যে কী কারণ?
এছড়াও এই উপজাতির নারীদের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর কোনও অধিকার নেই। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ছবি তুললেই নাকি রক্তাল্পতার মতো রোগ দেখা দেবে তাঁদের শরীরে। এই উপজাতির মহিলাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার আসল ছবিটা বাকি বিশ্বের কাছে অজানাই। ওদিকে বাইরের বিশ্বে যাই-ই হয়ে যাক না কেন, নিজেদের মধ্যে চালু প্রথায় এখনও গভীর বিশ্বাসই রাখেন এই উপজাতির মানুষরা।