গুজরাটে সাম্প্রদায়িক অশান্তিকে কেন্দ্র করে তৈরি বিবিসি-র তথ্যচিত্র নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থামছেই না। এবার এই ইস্যুতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিলেন AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তুললেন একাধিক প্রশ্ন। কী কী প্রশ্ন তাঁর? আসুন শুনে নিই।
গুজরাট অশান্তিকে ভিত্তি করে নির্মিত বিবিসি-র তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে এবার মোদি সরকারের উদ্দেশে একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর প্রশ্ন, গুজরাটে যে হত্যালীলা হয়েছিল তা করল কারা? সেটা কি ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের কাজ? গান্ধী হত্যাকারী গডসেকে নিয়ে ছবিও কি নিষিদ্ধ করবে কেন্দ্র, এ প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
আরও শুনুন: ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিদ্রুপ কাম্য নয়’, বিবিসি-কে খোলা চিঠি ৩০০ জন বিখ্যাত ব্যক্তির
বিবিস-র এই তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ হওয়ার পরই একে একে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তথ্যচিত্রটিতে ২০০২-এ গুজরাটের সাম্প্রদায়িক অশান্তি ও সেই সময় সে-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়েছিল। যা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেই মনে করেছে সরকার। এমনকী সম্প্রতি প্রাক্তন বিচারপতি, রাষ্ট্রদূত-সহ ৩০০ জন ব্যক্তি একটি খোলা চিঠি দিয়েছে বিবিসি-র উদ্দেশে। তাতে সাফ জানানো হয়েছে, দেশের নাগরিক ব্যক্তিগত ভাবে যাকেই ভোট দিন না কেন, প্রধানমন্ত্রী সমগ্র দেশেরই প্রধানমন্ত্রী। ফলত কেউ বা কোনও সংস্থা যদি মনগড়া ধারণার বশে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিদ্রুপ করে, তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এদিকে টুইটারে এই তথ্যচিত্রের অংশ ব্লক করা নিয়েও দেখা দিয়েছে বিতর্ক। যে দেশ বিশ্বের ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ বলে নিজের পরিচয় তুলে ধরে, সেখানে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপানো বা সেন্সরশিপের প্রয়োগ ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়েই এবার সরব ওয়েইসি। তাঁর বক্তব্য, G20 সম্মেলনের বিজ্ঞাপনে ‘মাদার অফ ডেমক্রসি’ কথাটি লেখা হয়েছে। সেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ কীভাবে সমর্থন করা যায়, প্রশ্ন তাঁর। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তোপ দেগে আসাদউদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, যে, গুজরাটে যে হত্যালীলা ও হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, তা কারা ঘটিয়েছিল? মহাকাশ থেকে এসে ভিনগ্রহীরা কি সে-কাজ করেছিল? তাঁর আরও প্রশ্ন, মোদি সরকার কি গান্ধী হত্যাকারী গডসেকে নিয়ে তৈরি ছবিও নিষিদ্ধ করবে? তবে প্রশ্নেই থেমে থাকেননি তিনি। তাঁর দাবি, গডসেকে নিয়ে তৈরি ছবিও নিষিদ্ধ করুক সরকার। ব্রিটিশ আমলের আইন টেনে এনে বিবিসি-র তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেই দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: গুজরাটে জয় ১৫৬ আসনে, ১৫৬ গ্রাম সোনা দিয়েই ‘সোনার মোদি’ বানালেন ব্যবসায়ী
ওয়েইসিকে সরাসরি উত্তর না দিলেও, বিরোধীদের এই ধরনের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজেজু। বিবিসি-র এই তথ্যচিত্র নিয়ে বিরোধী মতের পালটা দিয়ে তিনি সম্প্রতি কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘টুকরে টুকরে গ্যাং-এর থেকে এর থেকে বেশি আর কী আশা করা যায়?’ বিতর্ক-বিতণ্ডা যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে বিবিসি-র তথ্যচিত্র নিয়ে জল যে বহুদূর গড়াবে, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।