২০২২ চলে গিয়েছে। নতুন বছরে পা রেখেছে মানুষের সভ্যতা। এই একটা বছরে যেমন মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবন-যাপন, প্রযুক্তি পালটেছে, তেমনই ঘটেছে একটা নতুন ঘটনাও। বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এসে যোগ দিয়েছে সভ্যতার ইতিহাসে। যোগ দিয়েছে বলা এই কারণে যে, এই প্রকৃতির মধ্যেই থাকলেও এতদিন জানা ছিল না তাদের কথা। গত বছরে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন এরকমই অন্তত নতুন ৩৫১ রকমের উদ্ভিদ ও প্রাণী। আসুন শুনে নিই।
প্রকৃতির পাঠশালায় বিস্ময়ের শেষ নেই। মানুষ যত অনুসন্ধান করেছে, তত বেড়েছে সেই বিস্ময়। সেই নিরিখে ২০২২ বেশ উল্লেখযোগ্য। কেননা এই বছরেই বহু প্রজাতির অজানা জীবের কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের হিসাব বলছে, উদ্ভিদ-প্রাণী মিলিয়ে নতুন অন্তত ৩৫১ রকমের বা প্রজাতির জীবের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে মানুষের।
আরও শুনুন: ২০২২ সালে নেটদুনিয়ায় সবথেকে বেশি কাকে খুঁজেছেন ভারতীয়রা?
ক্যালিফোর্নিয়ার পর্বতমালা থেকে ব্রাজিল কিংবা মালদ্বীপ – বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রকৃতিতে বিশেষত পাহাড়ে ও জঙ্গলে চোখ রেখে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, বহু প্রাণী এই প্রকৃতিতে আছে যাদের কথা মানুষ জানতই না। এমনকী সমুদ্রের গভীরেও পাওয়া গিয়েছে নতুন প্রাণের সন্ধান। টিকটিকি, ব্যাঙ, মাছ থেকে গাছ – বহু প্রজাতির জীব আছে এই তালিকায়। যেমন ৮৪ প্রজাতির কীট-পতঙ্গ, মথ গোত্রের ৩৪টি প্রাণী এবং ২৩ রকমের মস অ্যানিমালের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে গত বছর। এই পতঙ্গদের আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের আশ্চর্য করেছে। কেননা চাষ-আবাদের ক্ষেত্রে এদের বিশেষ ভূমিকা আছে। এবং তা এই প্রাণীগুলি পালনও করে চলেছিল। এ ছাড়া মাছি পরিবারের সাত নতুন সদস্যের খোঁজ মিলেছে, খোঁজ মিলেছে নতুন প্রজাতির ছয় ব্যাঙেরও। এরা অবশ্য সাধারণ ব্যাঙ নয়, কেননা আকারে এগুলি খুবই ছোট। ৮ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের ব্যাঙগুলি কেন এমন ছোট আকারের হয়েই থেকে গেল তার খোঁজ চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এখানেই শেষ নয়, অন্তত তিন রকমের ডাইনোসরের কথা জানা গিয়েছে, এতদিন যাদের অস্তিত্ব ছিল বলেই জানত না মানুষ। আবার কুমিরের মতো একরকমের প্রাণীর খোঁজ মিলেছে, যা অন্তত পাঁচ দশক আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। এখনও প্রকৃতিতে আছে কিংবা এখন আর নেই এরকম মিলিয়ে-মিশিয়ে অন্তত ১১ প্রজাতির অ্যালগির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মাছ থেকে শুরু করে সরীসৃপ গোত্রের প্রাণীদের বহু নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে ২০২২-এ।
আরও শুনুন: ৭টি দুর্ঘটনাতেও হয়নি মৃত্যু, লটারিও জেতেন বিশ্বের সবচেয়ে ‘ভাগ্যবান’ ব্যক্তি
নতুন খোঁজ পাওয়া প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির কথা শুনে নেওয়া যাক। একরকমের পেঁচার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যার ডাক সাধারণ পেঁচার থেকে আলাদা। এই ডাকই মূলত বিজ্ঞানীদের চিনিয়ে দিয়েছে যে, এটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। আবার ব্রাজিলে এক নতুন প্রজাতির ‘সাউদার্ন ম্যানড স্লথ’-এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। মাদাগাসকারে দেখা মিলেছে এক নতুন টিকটিকির। মাত্র এক আঙুল দৈর্ঘ্য এই প্রাণীটির। কোস্টারিকায় আবার দেখা মিলেছে এক নতুন ব্যাঙের, যা ধূসর রঙের নয়, বরং বেশ রঙিন। নতুন ধরনের কাঁকড়াবিছাদেরও সন্ধান মিলেছে। নতুন রকমের মেঠো ইঁদুরের সন্ধান যেমন মিলেছে, তেমনই খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বিশেষ এক রেনবো ফিশের।
সব মিলিয়ে ২০২২-এ জীববৈচিত্রে যোগ হয়েছে বহু প্রাণ, যা বৈচিত্রকে আরও খানিক বাড়িয়েছে। এই সন্ধানের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। হয়তো সমস্ত প্রাণীই আর প্রকৃতিতে নেই, কিন্তু বিবর্তনের ইতিহাস এদের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হবে, এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।