যাদের হাত ধরে আমাদের বড়দিনকে চেনা, সেই সাহেবদের দেশ ইংল্যান্ডেও নাকি এককালে নিষিদ্ধ ছিল ক্রিসমাস। আর শুধু সেখানেই নয়, পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে, যেখানে এখনও দেখা মেলে না যিশুর। সেই সব দেশেই ক্রিসমাস পালন করতে গেলে কপালে জুটবে করা শাস্তি। কোথায় কোথায় জারি এমন কানুন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভালবাসার জোরেই মানুষকে দুঃখ ভুলবার পথ দেখিয়েছিলেন যিশু খ্রিস্ট। আর এমন বড় কথাটিকে মনে রাখতেই তাঁর জন্মদিনটি উদযাপন করা হয়। দেশ আর ধর্মের গণ্ডি ছাড়িয়ে বড়দিন ক্রমশ হয়ে উঠেছে সকলের উৎসব। কিন্তু জানেন কি, এমন কয়েকটি দেশ আছে, যেখানে বড়দিন পালন করা আইনিভাবেই নিষিদ্ধ?
আরও শুনুন: তরুণীর চুম্বন পেতে পারেন অচেনা ব্যক্তিও! ক্রিসমাসের এই প্রথার কথা জানেন?
ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা, ক্রিসমাসকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করে তোলায় যাদের অনেকখানি ভূমিকা রয়েছে, সেই দুই দেশেই এককালে নিষিদ্ধ ছিল বড়দিন পালন। ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধের পর রাজা প্রথম চার্লসকে সরিয়ে যখন শাসনভার হাতে নিলেন অলিভার ক্রমওয়েল, তিনি কোপ বসালেন এই উৎসবে। প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল জনতা, কিন্তু লাভ হয়নি। অবশেষে ১৬৫৮ সালে ক্রমওয়েলের মৃত্যুর পর ফের স্বমহিমায় ফিরে আসে ক্রিসমাস। এরও আগে, ১৬২০ সালে একই পথে হেঁটেছিল আমেরিকাও। পিউরিটান সম্প্রদায় মনে করত, ঈশ্বর পৃথিবী তৈরি করার পর যে দিনটিতে ছুটি নিয়েছিলেন, সেই স্যাবাথ ছাড়া অন্য কোনও ধর্মীয় দিবস থাকতে পারে না। ১৬৮৯ সালে এসে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।
আরও শুনুন: বড়দিনের অদ্ভুত সাজ! বাড়ির বদলে ‘দাড়ি’ সাজিয়ে রেকর্ড ব্যক্তির
ধর্মীয় ভাবাবেগের প্রশ্ন তুলে বড়দিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আরও একাধিক দেশে। যেমন সৌদি আরবে ইসলাম বহির্ভূত সবরকম উৎসব উদযাপনের উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি। ফলে বাদ পড়েছে বড়দিনও। মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগবে, এই কারণ দেখিয়ে বড়দিন পালন নিষিদ্ধ করেছে ব্রুনেই-ও। ২০১৫ সালে দেশটি ঘোষণা করেছিল, কেউ বড়দিন পালন করলে কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও, পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হবে।
ধর্ম না মানার কারণে বড়দিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিউবা। ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পরে সে দেশের সরকারকে নাস্তিক বলে ঘোষণা করেন। ১৯৬৯ সালে ক্রিসমাস পালন নিষিদ্ধ করেন এই বামপন্থী নেতা। সাধারণ মানুষ যাতে আমোদ আহ্লাদে সময় না কাটিয়ে ওই সময় ফসল উৎপাদনে মন দেয়, সে কথাই বলেছিলেন তিনি। তবে ১৯৯৮ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল কিউবা সফরে এসে কাস্ত্রোকে বুঝিয়েসুঝিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা রদ করান।
আরও শুনুন: ‘হ্যাপি’ নয়, বড়দিনের শুভেচ্ছায় কেন বলা হয় ‘মেরি ক্রিসমাস’?
আবার একনায়কতন্ত্রের জেরেও নিষিদ্ধ হয়েছে বড়দিন। যেমন উত্তর কোরিয়াতে যিশুর জন্মদিন পালনের নিয়ম নেই। কিম জং-এর দেশে কেবল রাষ্ট্রনায়কের জন্মদিন উপলক্ষেই ছুটি দেওয়া হয় এবং উৎসব পালন করা হয়। এমনকি ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া দুই দেশের সীমান্তে একটি ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করায় দুই দেশের মধ্যে প্রায় যুদ্ধ বেধে গিয়েছিল।
এছাড়া সোমালিয়াতেও বড়দিন এবং নতুন বছর উপলক্ষে কোনও উৎসব পালন করা বারণ। ক্রিসমাস পালন করা নিষেধ তাজিকিস্তানেও। ২০১৪ সাল থেকে সান্তাক্লজও নিষিদ্ধ হয়েছে এই দেশে। চিনেও বড়দিন উপলক্ষে ছুটি থাকে না। প্রকাশ্যে ক্রিসমাস ক্যারল গাইলেও এ দেশে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। ১৯৪৯ সাল থেকেই খ্রিস্টধর্মের সবকিছুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এই দেশ।