দেখতে যেমন এক, উত্তর লেখার ধরনও তেমনই! তা দেখে পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ উঠেছিল দুই যমজ বোনের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই দুই বোন দাবি করেছিলেন, কোনও অন্যায় তাঁরা করেননি। ঘটনার জল আদালত অবধি গড়ায়। আর সেখানেই ওই দুই বোনকে নির্দোষ ঘোষণা করে, জরিমানা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন, শুনে নিই।
৩০৭টি উত্তরের মধ্যে ২৯৬টি উত্তর হবহু এক! সৎ ভাবে পরীক্ষা দিলে নাকি এমন মিল হওয়া অসম্ভব। এমনই যুক্তি দেখিয়ে দুই যমজ বোনের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ এনেছিল মার্কিন মুলুকের এক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তখন এহেন অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই আদালতে মানহানির মামলা করেন ওই দুই বোন, সেটা ২০১৬ সালের ঘটনা। ৬ বছর পর সেই মামলার শুনানিতে তাঁদের নির্দোষ ঘোষণা করল আদালত। এবং জরিমানা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হল সাড়ে ১২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।
আরও শুনুন: একটাই বাড়ির ঠিকানা দুই রাজ্যে, দুর্ভোগ নেই বলে আপত্তি নেই মালিকেরও
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। বেশ কয়েকবছর আগে সেখানকার দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ উঠেছিল। এক্ষেত্রে ওই দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার একটি বিশেষ কারণও ছিল। আসলে কায়লা এবং কেলি নামে ওই দুই ছাত্রী ছিলেন ‘আইডেন্টিকাল টুইনস’ অর্থাৎ তাঁদের দুজনকেই হবহু একরকম দেখতে। সেই সূত্র ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিল তাঁরা নাকি পরীক্ষায় নকল করেছেন। একইরকম দেখতে হওয়ায়, পরীক্ষকের চোখও এড়িয়ে গেছে তাঁদের কারচুপি। এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল দুজনের উত্তরপত্রও নাকি হবহু এক। সঠিক উপায়ে পরীক্ষা দিলে খাতায় এমন অদ্ভুত মিল পাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। এমন দাবি করেই তাঁদের বিরুদ্ধে অসাধু উপায় অবলম্বনের অভিযোগ এনেছিল ওই বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে অন্য কেউ থাকলে হয়তো ভয় পেয়ে ক্ষমা চেয়ে নিত। কিন্তু এক্ষেত্রে সেসব কিছুই করেননি ওই দুই বোন। বরং জোর গলায় তাঁরা দাবি করেছিলেন যে, কোনও অন্যায় কাজ তাঁরা করেননি। উলটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনা এমন অভিযোগে তাঁদের মানহানি হয়েছে বলে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
আরও শুনুন: হিন্দু স্ত্রীর জন্য নিজেই ধর্মান্তরিত হলেন মুসলিম ব্যক্তি, নাম হল কৃষ্ণ সনাতনী
দীর্ঘ ৬ বছর পর সেই মামলার বিচার শোনাল আদালত। সেখানে দুই বোনকে নির্দোষ বলেই ঘোষণা করেছে আদালত। একই উত্তর লেখার অভিযোগও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন হিসেবেই জানানো হয়। এ বিষয়ে এক মনোবিদ দাবি করেন, যমজ ভাইবোন অনেক ক্ষেত্রেই একই কাজ একই ভাবে করে থাকেন। এমনকী তাঁদের চিন্তাভাবনা করার ধরনও প্রায় একইরকম হয়। সেক্ষেত্রে উত্তর লেখার ধরন একরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমন তত্ত্ব শোনার পরই আদালতের পর্যবেক্ষণ, দুই ছাত্রীর সত্যিই মানহানি হয়েছে। তারপরই ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জরিমানা হিসেবে ১২.৩৯ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।