চলতি বিশ্বকাপের চমক যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তা অবশ্যই মরক্কো। স্পেন, পর্তুগালের মতো পরাক্রমী দল ধরাশায়ী হয়েছে হাকিমিদের সামনে। সেই মরক্কোকে সেমিফাইনালে পৌঁছাবে, এমন ভবিষ্যদ্বাণী করে হাসির পাত্র হয়েছিলেন ক্যামেরুনের তারকা স্যামুয়েল এতো। যদিও এখন তাঁকে সমীহই করছে ফুটবলবিশ্ব।
এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বকাপে বিপক্ষের কেউই বল জড়াতে পারেনি মরক্কোর জালে। একটি গোল হয়েছে তা-ও আত্মঘাতী। উলটোদিকে তাঁদের সামনে এসে একে একে বিদায় নিয়েছে স্পেন-পর্তুগাল। ফুটবল বিশ্বকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে ওয়ালিদ রেগরাগুই-এর মরক্কো।
আরও শুনুন: ২৪ বছর বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি আর্জেন্টিনা, কিন্তু কেন?
অথচ বিশ্বকাপ শুরু সময় তাঁদের কেউ হিসাবের মধ্যেই ধরেননি প্রায়। ধরে নেওয়া হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপ তাবড় তারকাদের শেষ বিশ্বকাপ। তালিকায় কে ছিলেন না! মেসি, রোনাল্ডো, মুলার, মদ্রিচ, হ্যারি কেন-দের নিয়ে তাই যত চর্চা হয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও জোটেনি হাকিমিদের কপালে। বরং ফুটবল বিশ্ব মেতে ছিল এমব্যাপে, মুসিয়ালা, গাভিদের নিয়ে। এদিকে বিশ্বকাপ তো অঘটনের সেরা রঙ্গমঞ্চ। কোন অঙ্ক যে কখন ভুল হয়ে যায়, তার হিসাব মেলানো ভার। যথারীতি তাই-ই হয়েছে। ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। জার্মানি তো আগেই বিদায় নিয়েছে, এমনকী স্পেনকে ফিরতে হয়েছে ঘরে। সেমির আগেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ব্রাজিলের। হ্যারি কেনের যাত্রাও শেষ। এরকম চমকপ্রদ বিশ্বকাপেই সবাইকে যারপরনাই চমকে দিয়েছে মরক্কো।
আরও শুনুন: বিছানার নিচে জুতোর বাক্সে লুকোনো ছিল বিশ্বকাপের ট্রফি, কিন্তু কেন?
ফুটবল নব্বই মিনিটের লড়াই। সেখানে লড়াইটাই শেষ কথা। এটাই যেন মন্ত্র গোটা মরক্কো দলের। আর তাই কতটা চর্চা হয়েছে, দলে তারকা আছে কি নেই, সে সব প্রশ্ন পিছনে ফেলে পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়ে তারা পৌঁছেছে সেমিফাইনালে। এই প্রায় অভাবিত ফলাফল যেন কারও হিসাবের মধ্যেই ছিল না। ব্যতিক্রম একজন। তিনি ক্যামেরুনের বিখ্যাত খেলোয়াড় স্যামুয়েল এতো। বার্সার এই প্রাক্তন স্ট্রাইকার বেশ কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন মরক্কোর সেমিতে খেলার সম্ভাবনার কথা। সে সময় তাঁর অনুমান নিয়ে হাসাহাসিই হয় নেটদুনিয়ায়। এতবড় ফুটবলার কেন যে মরক্কোর হয়ে বাজি ধরলেন, তা যেন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না ফুটবলপ্রেমীরা। বাস্তবে দেখা গেল তাঁর পর্যবেক্ষণ অভ্রান্ত। মরক্কোর মধ্যে যে সম্ভাবনা তিনি দেখেছিলেন তা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি হয়েছে।
আরও শুনুন: সিগন্যাল দেখেই এল ভাবনা, ফুটবলে চালু হল লাল আর হলুদ কার্ডের শাসন
ফলে হাওয়া গিয়েছে ঘুরে। যাঁরা তাঁর অনুমান নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন, তাঁরাই এখন সমীহ করছেন স্যাম্যুয়েলের মতামতকে। বলতে গেলে গোটা বিশ্বই সমীহ করছে মরক্কোকে। সেমিতে এমব্যাপে-গ্রিজম্যানদের বিরুদ্ধে খেলবেন হাকিমিরা। কিন্তু তাতে কী! কেউ একবাক্যে বলতে পারছেন না যে, ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত। ফুটবল যে সম্ভাব্য অসম্ভবের খেলা, এই বিশ্বকাপে মরক্কো যেন তা নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে সকলকেই।