প্রসূতির শরীরে রয়েছে এইডসের জীবাণু। তাই আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তাঁকে ছুঁয়েই দেখলেন না হাসপাতালের কর্মীরা। দীর্ঘ ৬ ঘন্টা প্রবল প্রসব বেদনা নিয়ে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে পড়ে থাকলেন মহিলা। অবশেষে হাসপাতাল সুপারের উদ্যোগে অস্ত্রোপচার হলেও বাঁচানো গেল না তাঁর গর্ভের সন্তানটিকে। কোথায় ঘটেছে এমন অমানবিক ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বিনা চিকিৎসায় সন্তান হারালেন প্রসূতি। চিকিৎসা না হওয়ার কারণ, তিনি এইডস আক্রান্ত। প্রায় ৬ ঘন্টা কোনওরূপ চিকিৎসা ছাড়াই ফেলে রাখা হল তাঁকে। পরে অস্ত্রোপাচার করে প্রসব হলেও বাঁচানো গেল না সদ্যজাতকে। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
আরও শুনুন: একা আসার ‘অপরাধে’ প্রসূতিকে ভর্তি নিল না হাসপাতাল, রাস্তাতেই জন্ম হল সন্তানের
ঘটনাটির কেন্দ্র স্থল উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল বছর কুড়ির এই প্রসূতিকে। কিন্তু তিনি এইডস আক্রান্ত জানার পর তাঁকে ছুঁয়ে দেখতেই অস্বীকার করেন হাসপাতালে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফলে বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘ ৬ ঘন্টা পড়ে থাকতে হয় ওই প্রসূতিকে। এরপর রোগীর আত্মীয়দের অনুরোধে অস্ত্রোপচার করতে এগিয়ে আসেন হাসপাতাল সুপার। একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্মও হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। জন্মানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় সদ্যজাত শিশুটির।
আরও শুনুন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, কাতারে থাকছেন না ‘বিশ্বকাপের হটেস্ট ফ্যান’
জানা গিয়েছে প্রসূতির বাবা নিতান্তই এক সাধারণ কারখানার শ্রমিক। তাই প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেও মেয়ের চিকিৎসার খরচ টানতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়েই মাঝরাতে মেয়েকে নিয়ে যোগীরাজ্যের এই সরকারি হাসপাতালে আসেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এইডস সচেতনতা নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাও। তাঁরাই হাসপাতালে থাকা কর্মীদের বলেন প্রসূতির অবস্থার কথা। কিন্তু সেকথা শোনার পরই তাঁকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখননি কেউ। অনেকটা সময় কেটে গেলে তাঁরা হাসপাতাল সুপারের দ্বারস্থ হন। তাঁর হস্তক্ষেপে সন্তান প্রসব হলেও, অকালেই হারাতে হয় সন্তানটিকে। যদিও তাঁদের তরফে গাফিলতির কোনও অভিযোগ মানতে চাননি হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত সুপার সঙ্গীতা আনেজা। তাঁর দাবি অন্যান্য রোগীদের মতোই এই প্রসূতির যথাযোগ্য দেখভাল করা হয়েছে। তবুও রোগীর পরিবারের আনা অভিযোগের ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কেউ দোষ করে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার। অন্যদিকে রোগীর পরিবারের আনা অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঐ কর্মকর্তা। সরকারি হাসপাতালেও এইডস সচেতনতার অভাব এবং চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি।