বলা হয় পৃথিবীর সেরার সেরা প্রেমপত্র নাকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই লেখা হয়েছিল। তাই ইতিহাসের যেকোনও ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে অসাধারণ কিছু প্রেমের কাহিনী। যার ব্যতিক্রম নয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও। যুদ্ধ চলাকালীন আলাপ হওয়া প্রেয়সীর সঙ্গে প্রায় ৭৮ বছর পর দেখা হল এক সৈনিকের। বর্তমানে দুজনেই জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। তবু এতদিনেও তাঁদের প্রেম কমেনি এতটুকু। দেখা হওয়ার পর কী করলেন তাঁরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আলাপ হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন। তারপর আর দেখাটুকুও হয়নি। কেটে গেছে দীর্ঘ ৭৮ বছর। অবশেষে অজানা চমৎকারে আবার মুখোমুখি তাঁরা দুজন। মাঝের এতগুলো বছর সামান্য কথাটুকুও যে হয়নি, তাঁদের দেখে সেকথা বোঝার উপায় নেই। জীবনের ৯০ টা বসন্ত কাটিয়েও তাঁদের যৌবনের রং এতটুকু ম্লান হয়নি। তাই এই বয়সে এসেও একে অপরকে বিয়ে করতে রাজি তাঁরা।
আরও শুনুন: ফিরলেন না ঐন্দ্রিলা, ফিরল অনাত্মীয়ের জন্য প্রার্থনা আর কান্নার দিন
যুদ্ধ নিয়ে লেখা প্রেমের সাহিত্যের বিস্তৃতি অসীম। কবিতা থেকে আরম্ভ করে গল্প, উপন্যাস কত কিছুই না লেখা হয়েছে যুদ্ধের পটভূমিকায়। তবে সেগুলির বেশিরভাগই তৈরি হয়েছে কোনও প্রেম কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এই গল্পটিকেও তেমনই এক প্রেমের উপন্যাস বলা চলে। দীর্ঘ ৭৮ বছর ধরে নিজের মানিব্যাগে একটি ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন রেজিনাল্ড পাই। ১৯৮৮ সালে ব্রিটেনের এক কোম্পানির হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি ২১ বছরের যুবক। যুদ্ধক্ষেত্রেই দেখা হয় হুগেত জোফ্রোয়া নামে এক বছর ১৪ -র বালিকার সঙ্গে। প্রথমবার দেখেই তাঁকে মনে ধরে রেজিনাল্ডের। তারপর স্যান্ডউইচ খাওয়ার অছিলায় দুজনের মধ্যে শুরু হয় বাক্যালাপ। যদিও তার স্থায়ীত্ব ছিল খুবই কম। তবু মনে মনে দুজনেই দুজনকে পছন্দ করে ফেলেছিলেন। খাওয়া শেষে নিজের কাজে চলে যান রেজিনাল্ড। পরে তাঁবুতে ফিরে এলে দেখেন কে যেন তাঁর টেবিলের উপর একটি ছবি রেখে গেছে। হাতে তুলে দেখলেন ছবিতে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে জোফ্রোয়া। সময়মতো যুদ্ধ শেষ হয়। রেজিনাল্ডের বাড়ি ফেরারও সময় ঘনিয়ে আসে। কিন্তু সেই প্রেয়সীকে আর কোথাও খুঁজে পাননি তিনি। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৭৮ টা বছর। এতগুলো বছর নিজের মানিব্যাগে যত্ন করে রেখে দেন সেই ছবি। একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় জোফ্রোয়াকে খোঁজার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তারপর থেকে নতুন কারও সঙ্গে আলাপ হলেই সেই প্রেয়সীর গল্প শোনাতেন রেজিনাল্ড। আর বলতেন তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছা, একবারের জন্য জোফ্রয়ার সঙ্গে দেখা করা।
আরও শুনুন: লম্বা হওয়ার অপারেশন! ৩ ইঞ্চি লম্বা হতে কোটি টাকা খরচ ব্যক্তির
সেভাবেই একদিন ট্যাক্সি করে ফেরার পথে চালককে নিজের শেষ ইচ্ছার কাহিনী শুনিয়েছিলেন রেজিনাল্ড। আর তারপরই বদলে যায় সবকিছু। রেজিনাল্ডের গল্প শোনার পর সেই ট্যাক্সি চালক নিজ উদ্যোগে জোফ্রোয়ার ছবি সহ রেজিনাল্ডের ইচ্ছার কথা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। সেই খবর নজরে আসে জোফ্রোয়ার কন্যার। তিনিই সরাসরি যোগাযোগ করেন রেজিনাল্ডের সঙ্গে। এবং অবশেষে, নিজের হারিয়ে যাওয়া প্রেয়সীর সামনে এসে দাঁড়ান ৯৯ বছরের রেজিনাল্ড। চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে দুজনেরই। প্রথম দেখায় ঠিক যেভাবে জোফ্রোয়াকে স্যান্ডউইচ দিয়েছিলেন রেজিনাল্ড, ঠিক সেভাবেই নিজে স্যান্ডউইচ বানিয়ে উপহার দিলেন। হাসিমুখেই সেই উপহার গ্রহণ করেন জোফ্রোয়া। তাঁরও এখন বয়স ৯২ ছুঁইছুঁই। তবু সদ্য যুবক-যুবতীর মত, আবার সেই প্রথম দেখার দিনে ফিরে গেলেন ওঁরা। দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, এতবছর পর যে দেখা হয়েছে। বিয়ে করতে চান দুজনে। সুযোগ পেলেই শুভ কাজটি সেরে ফেলবেন। তাঁদের পুনর্মিলনে বেজায় খুশি দুজনের পরিবারের বর্তমান সদস্যরাও। রেজিনাল্ড ও জোফ্রোয়ার বিয়ের তোড়জোড় করতে চান তাঁরাও।