অকালে হারাতে হবে প্রথম স্বামীকে, তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে সুখের যোগ স্পষ্ট! জ্যোতিষীর মুখে এমন ভবিষ্যদ্বাণী শুনেই বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণের এক তরুণী। আর সেই কুসংস্কারের বশেই নিজের বর্তমান প্রেমিককে হত্যা করতে হল তাঁকে। রহস্যে ঘেরা খুনের কিনারা করতে গিয়ে রীতিমতো তাজ্জব পুলিশও। কী ঘটেছে আসলে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জন্মছক অনুযায়ী তাঁর নাকি বৈধব্যযোগ প্রবল। তবে প্রথম স্বামীর মৃত্যু হলেই জীবনে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী, দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বেশ সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারবেন তিনি। কিন্তু বিধি বাম! এমন বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রেমিক। তাই রাগের বশে সেই প্রমিককেই হত্যা করল তামিলনাড়ুর এক তরুণী।
আরও শুনুন: কেবল ধর্ষণের প্রমাণ নয়, সেনাবাহিনীতেও চলত ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’, কোন দেশের নিয়ম জানেন?
বছর ২২ এর গ্রীষ্মা ও তাঁর প্রেমিক শ্যারন রাজ তামিলনাড়ুর তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা। বেশ কয়েকবছর ধরেই তাঁদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন সকলের কাছেই তাঁরা যুগল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই গ্রীষ্মা জানতে পারেন তাঁর জন্মছকে অকাল বৈধব্যের যোগ রয়েছে। সেকথা জেনেই নিজের প্রেমিককে নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে যান তিনি। বাড়িতে কিছু না জানিয়েই হাজির হন এক জ্যোতিষের কাছে। সমস্ত ঘটনা শোনার পর সেই জ্যোতিষ তাঁকে নিদান দেন, প্রথম স্বামীর মৃত্যু হলেই দ্বিতীয় স্বামী নিয়ে সুখে সংসার করতে পারবেন তিনি! শোনামাত্র গ্রীষ্মা পরিকল্পনা করেন প্রথমে তিনি অন্য কাউকে বিয়ে করবেন তারপর সেই ব্যক্তির মৃত্যু হলেই আবার তাঁর প্রমিকের কাছে ফিরে আসবেন। সেইমতো এক আর্মি অফিসারের সঙ্গে বিয়েও স্থির হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু হঠাৎ করে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারেননি রাজ। জ্যোতিষীর কথাগুলিকেও কুসংস্কার বলেই দাবি করেন তিনি। বারবার নিজের পরিকল্পনার কথা বলা সত্ত্বেও তাঁকে শান্ত করতে পারছিলেন না গ্রীষ্মা। প্রায় রোজই তাঁদের মধ্যে এই নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। অবশেষে সেই অশান্তির হাত থেকে মুক্তি পেতেই তাঁকে কীটনাশক মেশানো শরবত খাইয়ে হত্যা করেন গ্রীষ্মা।
আরও শুনুন: পাকিস্তানের প্রেম-কথা! সামাজিক চোখরাঙানি এড়িয়ে ৫২-র শিক্ষককেই বিয়ে ২০-র ছাত্রীর
কিন্তু আসল ঘটনা কিছুটা হলেও আলাদা বলে দাবি করেছে পুলিশ। তাঁদের মতে, গ্রীষ্মা কোনও কারণে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন। সেই কারণেই আর্মি অফিসারের সঙ্গে বিয়েতে মত দেন তিনি। কিন্তু সেই বিয়ে রাজ মেনে না নেওয়ায় তাঁকে খুন করতে বাধ্য হন গ্রীষ্মা। জ্যোতিষীর কথা উল্লেখ করে নিজে মুখেই পুলিশকে এসব জানিয়েছেন গ্রীষ্মা। রাজ নাকি প্রাথমিক ভাবে গ্রীষ্মার অন্যত্র বিয়ের খবর শুনে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। একথা শুনেই গ্রীষ্মার ভয় হয় যদি তাঁর হবু স্বামীর কাছে এই ছবি পৌঁছয়, তা হলে বিপদ হতে পারে। তাই নিজের সম্মান রাখতে এমন কাজ করেছেন তিনি। অন্যদিকে গ্রীষ্মার পরিবারের দাবি, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য রাজ সবসময় চাপে রাখত তাঁদের মেয়েকে। জ্যোতিষীর করা ভবিষ্যদ্বাণীকে বারবার ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন রাজ। সেই কারণেই গ্রীষ্মাকে একটি গির্জায় নিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়েও করেছিলেন শ্যারন। কিন্তু এই ঘটনায় মনে মনে মোটেই খুশি ছিলেন না গ্রীষ্মা। প্রথমদিকে রাজ যাতে তাঁর মনের ইচ্ছা ধরতে না পারেন, তাই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিনয় করে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তলে তলে তাঁকে খুন করার ছকও কষে নিয়েছিলেন তার মধ্যেই। পুরো ঘটনা জানতে পেরে তাজ্জব পুলিশ অফিসাররাও।