একাধিক নৃশংস গণহত্যার সাক্ষী নাকি এই নদী। হাজার হাজার মানুষের লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল তার জলে। আর সেই কারণেই নাকি মাঝে মাঝে টকটকে লাল হয়ে যায় এই নদীর জল, এমনটাই বিশ্বাস স্থানীয়দের। কোন কারণ রয়েছে এর নেপথ্যে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঈশ্বরের অভিশাপেই নাকি মাঝে মাঝে লাল হয়ে যায় এই নদীর জল। শহরের মানুষদের মনে করিয়ে দেয় এক ভয়ংকর ইতিহাসের কথা। যখন বন্দুকের গুলিতে, বেয়নেটের খোঁচায় ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। আর তারপর, বুটপরা পায়ের লাথিতে তাদের ঠাঁই হয়েছিল নদীর কালো জলের তলায়। হাজার হাজার মৃতদেহের দুঃসহ ভার নিয়ে লাল হয়ে উঠেছিল নদীর জল। আর সেই ইতিহাসই নাকি ফিরে ফিরে আসে এখনও। প্রায় প্রত্যেক বছরেই। আপাতদৃষ্টিতে কোনও কারণ না থাকলেও হঠাৎ করেই লাল হয়ে যায় ডাল্ডিক্যান নদীর জল।
আরও শুনুন: ‘নরকের দ্বার’ থেকে জীবিত ফেরেনি কোনও প্রাণী, কী রহস্য রয়েছে নেপথ্যে?
রাশিয়ার এই নদীটি ঘিরে এমন আশ্চর্য মিথের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল ২০১৬ সালে। সে দেশের বাসিন্দা পিটার লুনিয়েভ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিয়েছিলেন ওই নদীর একটি ছবি। দেখা গিয়েছিল ফাঁকা প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা ওই নদীর জল রক্তের মতো লাল রঙা। তখন অবশ্য অনেকেই ভেবেছিলেন এ কোনও প্রযুক্তির কারসাজি। কিন্তু এরপর রাশিয়ার আরও কিছু মানুষ এই নদীর ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন। জানা গিয়েছে, প্রতি বছরেই গ্রীষ্মকালে লাল হয়ে গিয়েছে নদীর জল। পুরনো বাসিন্দাদের কারও কারও মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নৃশংস কিছু গণহত্যা দেখেছে এই শহর। যেখানে হাজার হাজার মানুষের লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল এই নদীর জলেই। সেই নারকীয় ঘটনার অভিশাপ বয়ে নিয়ে আজও রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে নদীর জল, এমনটাই বিশ্বাস তাঁদের।
আরও শুনুন: ‘আর একটিও বিয়ে নয়’, ব্রিটেনের গ্রামে অদ্ভুত সাইনবোর্ড, কিন্তু কেন?
কেউ কেউ আবার এই রহস্যের উত্তর খুঁজেছেন বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই। তাঁদের মতে, আশেপাশে থাকা খনি ও নিকেল উৎপাদনকারী কারখানাগুলির বর্জ্য নদীর জলে মেশার কারণেই ঘটছে এহেন কাণ্ড। ওই বর্জ্যে উপস্থিত অক্সিডাইজড আয়রন জলে মিশে জল লাল করে তুলছে। কানাডাতেও নিকেল কারখানার দরুন এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা হল, এই নিয়ে হইচইয়ের জেরে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় নিকেল নিষ্কাশন কারখানা ‘নরনিকেল’-কে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তার পরেও নদীর লাল রং হওয়া আটকানো যায়নি। কারও কারও মতে, সারাবছর ধরে বরফের তলায় চাপা পড়ে থাকে বর্জ্যগুলি। বিশেষ করে ওই নদী যে অঞ্চলে অবস্থিত, সেই নরিলস্ক অঞ্চল উত্তর মেরুর নিকটবর্তী বলে তুষারপাতের হারও বেশি। গ্রীষ্মের সময় বরফগলা জলের সঙ্গে নদীতে এসে মেশে বর্জ্যগুলিও, এমনটাই মনে করেন অনেকে। তবে কোনও কারখানা গড়ে ওঠার আগেও নাকি একইভাবে লাল হত নদীর জল, যার সাক্ষ্য মেলে পুরনো রুশ ছড়া থেকে। তাই এই রহস্যের উত্তর অজানাই রয়ে গিয়েছে আজও।