১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে দেশের অন্তত ৭ শতাংশ মেয়ে। উপরন্তু, এই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই। আশঙ্কার খবর শোনাল ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’ বা ‘এনসিআরবি’। ঠিক কী বলা হয়েছে রিপোর্টে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি জাতীয় শিশুকল্যাণ দপ্তরের এক মামলার সূত্র ধরে ফের উঠে এল বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সেই সন্তানধারণের প্রবণতার কথা। দেশের শীর্ষ আদালতে দায়ের হওয়া ওই মামলায় দেখা যায় একটি নাবালিকা মুসলিম মেয়েকে বিয়ের অনুমতি দিয়েছে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার আদালত। যে ঘটনা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড অনুযায়ী জারি থাকা পক্সো আইনকে অমান্য করছে বলেই মত ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস তথা এনসিপিসিআর-এর। আর এই ইস্যুতেই দেখা গিয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে পৃথক শরিয়া আইন প্রচলিত থাকার কারণে সেখানে বাল্যবিবাহের হার হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় বেশ বেশি। এমনকি নাবালিকা অবস্থায় সন্তান ধারণের হারও হিন্দু সমাজের তুলনায় মুসলিম সমাজে অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার সমীক্ষা।
আরও শুনুন: মঙ্গলসূত্র খুলতে হবে, তবে আপত্তি নেই বোরখায়! নির্দেশ পরীক্ষাকেন্দ্রে, বিতর্ক তেলেঙ্গানায়
দেশজুড়ে মেয়েদের পরিস্থিতি ঠিক কেমন, কেন্দ্রীয় সংস্থার সমীক্ষা থেকে তার অনেকখানি আঁচ পাওয়া যায়। বিশেষ করে মেয়েদের উপর হওয়া নির্যাতনের ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’ বা ‘এনসিআরবি’। চলতি বছরের গোড়াতেই কেন্দ্রীয় সংস্থার পেশ করা রিপোর্ট মোতাবেক জানা গিয়েছিল, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা প্রায় ১৫.৩ শতাংশ বেশি। এমনকি বাড়ির ভিতরেও যে মেয়েদের একটা বড় অংশ আদৌ সুরক্ষিত নয়, সে কথাই জানিয়েছিল ওই রিপোর্ট। জাতীয় সমীক্ষা অনুযায়ী, নারী নির্যাতনের মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ‘স্বামী ও তাঁর পরিবারের দ্বারা নির্যাতন’-এর ঘটনা। নারী নির্যাতনের ৩১.৮ শতাংশই এই ধরনের ঘটনা। আর এবার সেই নির্যাতনেরই আরও একটি দিক উঠে এল কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্টে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, প্রত্যেক দিন অন্তত ৩৪ জন নাবালিকা অপহৃতা হয়, যাদের জোর করে বিয়েতে বাধ্য করা হয়। বিশেষ করে সম্প্রদায়ভিত্তিক আইন চালু থাকার কারণে এই জাতীয় ঘটনা আরও বাড়ছে বলেই মত শিশুকল্যাণ বিষয়ের কর্মীদের। গত পাঁচ বছরের মধ্যে বাল্যবিবাহের ঘটনা ২২২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে বলেই জানাচ্ছে সমীক্ষা।
আরও শুনুন: মক্কায় আছেন স্বয়ং মক্কেশর মহাদেব! পুরীর শঙ্করাচার্যের দাবিতে শুরু জোর চর্চা
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে মোতাবেক, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে দেশের অন্তত ৭ শতাংশ মেয়ে। এই হার আবার সবচেয়ে বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে, ৮.৪ শতাংশ। হিন্দুদের ক্ষেত্রে এই হার ৬.৫ শতাংশ। এখান থেকেই স্পষ্ট, মুসলিম মেয়েদের মধ্যে নাবালিকা অবস্থায় সন্তান ধারণের হার হিন্দু মেয়েদের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বাধা থাকায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে বলেই মনে করছেন সমীক্ষকরা। কোনও নাবালিকাকে বিয়ে করার কারণে হিন্দু ব্যক্তির শাস্তি হলেও, মুসলিম শরিয়া আইন মতে এ কাজ অপরাধ নয়। সব মিলিয়ে দেশের কিশোরীদের অবস্থা নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কাই উসকে দিল জাতীয় সংস্থার এই সমীক্ষাগুলি।