কোনও জটিল সমস্যা মনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলছে! অথচ কিছুতেই তা সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রায়শই আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আরও আশ্চর্য, যখন দেখা যায়, স্নান করতে করতে হঠাৎই অন্ধকারে আলো। সমস্যার সমাধান হোক কিংবা সৃষ্টিশীল ভাবনা, সবই যেন এই সময়টা মাথায় খেলে যায়। কিন্তু কারণটা কী? শুনে নিই।
স্নানের সময়টা যেন ভাবনারও আনাগোনার সময়। শরীরের শুদ্ধি শুধু নয়, মনেরও যেন এটা সাফসুতরো হওয়ার সময়। আর তাই যে বিষয়টি মনের মধ্যে অনেকক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে, অথচ কিছুতেই দানা বাঁধছে না, এই সময়েই ম্যাজিকের মতো তা রূপ পেয়ে যায়। বা কোনও সৃষ্টিশীল ভাবনা আচমকাই চলে আসে মাথায়।
আরও শুনুন: চলছে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার, অপারেশন টেবিলেই টানা ৯ ঘণ্টা স্যাক্সোফোন বাজালেন রোগী
কিন্তু এ কি নেহাতই কাকতালীয়? নাকি এর নেপথ্যে আছে বিজ্ঞানও? যদি একজন কি দুজনের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটত, তাহলে নাহয় ব্যতিক্রম বলে উড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু বাস্তব বলছে আলাদা কথা। বহু মানুষই স্নানের সময় সৃষ্টিশীল ভাবনার খোরাক পান। অর্থাৎ এর পিছনে নিশ্চিতই শারীরবৃত্তীয় কারণ আছে।
আমাদের সৃষ্টিশীলতার নেপথ্যে অনেকটা ভূমিকা পালন করে ডোপামিন। ফিল-গুড এই নিউরোট্রান্সমিটারের ক্ষরণ আসলে আমাদের মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলে। আর আনন্দময় মনই হয়ে উঠে সৃষ্টির উর্বর জমি। এই ডোপামিন ক্ষরণ নানা কারণে হতে পারে। ব্যায়াম করা বা পছন্দের সিনেমা দেখার দরুন যেমন হতে পারে, তেমনই ঈষদুষ্ণ জলে স্নানও ডোপামিন ক্ষরণের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। আবার এই ক্ষরণ জন্ম দেয় আলফা ওয়েভের। দুয়ের যুগলবন্দি ভাবনার দিক থেকে মানুষকে অনেকটা এগিয়ে দেয়।
আরও শুনুন: কন্ডোম, লিপস্টিক বা চকোলেট, সবই নাকি আমিষ! জানেন কি?
আর-একটি বিষয়ও এই প্রেক্ষিতে মাথায় রাখতে হবে। আমাদের শরীরের ‘ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক’ বা ডিএমএন যাকে বলা হয়, তাও চাঙ্গা হয়ে ওঠে ডোপামিন ক্ষরণে। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ অংশ ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। অবচেতনের সঙ্গেও যোগাযোগ নিবিড় হয়। সাধারণ ভাবে, বিক্ষিপ্ত চিন্তায় মন এক বিন্দুতে সংহত হতে পারে না। ফলে একটা ভাবনা দানা বাঁধে না। বা নকশা ফুটে উঠেও হারিয়ে যায়। কিন্তু ডোপামিন ক্ষরণের দরুন এই ডিএমএন সক্রিয় হলে, মন অনেকটাই একটি বিষয়ে নির্দিষ্ট বা ফোকাসড হতে পারে। ফলে সমস্যার সমাধান হোক বা সৃজনশীল ভাবনা, এই সময়টা অনায়াসে মাথায় চলে আসে, যা সাধারণ সময়ে অধরাই থেকে যায়।
অবশ্য সময়ের দিকটিও খেয়াল করার মতো। সাধারণ আমরা সকালে বা রাতেই স্নান করি। সকালের দিকে, কর্মব্যস্ততায় ঢুকে পড়ার আগে মন যেমন শান্ত থাকে, তেমনই দিনের শেষেও শরীর-মন অনেকটা রিল্যাক্সড থাকে। এই অনুকূল পরিস্থিতিও সৃজনশীলতার সহায়ক।
তাই স্নানের সময় যে নানা আইডিয়া মাথায় খেলে যায়, তা নেহাতই কাকতালীয় নয়। বরং তার নেপথ্যেও আছে বিজ্ঞানের যুক্তিই।