এক প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ, অথচ অন্যের কাছে তা-ই নাকি সুস্বাদু খাবার। অন্য মানে আর কেউ নয়, সর্বভুক বলে খ্যাত মানুষই হাসিমুখে খেয়ে থাকে এইসব ‘খাদ্য’। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কফি থেকে শুরু করে আইসক্রিম, সব কিছুতেই মিশে থাকে এমন কিছু পদার্থ যা আসলে বর্জ্যই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলে, শরীরের পক্ষে মধুর মতো উপকারী পদার্থ কমই আছে। কিন্তু এই স্বাস্থ্যকর পদার্থটি যে আসলে এক প্রাণীর বমি, সে কথা জানেন কি? আজ্ঞে হ্যাঁ। মৌমাছির পেটের ভিতর থাকা নেকটার বা ফুলের রসের পরিমাণ যখন অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তখন তা বমি করে বাইরে বার করে দেয় মৌমাছিরা। সেই নেকটার থেকে জল শুকিয়ে যাওয়ার পর সংগ্রহ করা হয় মধু। আর কেবল মধুই নয়, মানুষ এমন অনেক কিছুই খেয়ে থাকে যা আসলে কোনও না কোনও প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ।
আরও শুনুন: লক্ষ্মী থেকেই ‘ল্যাকমে’ নামকরণ, স্বাধীন দেশের মেয়েদের সাজিয়ে তোলার প্রকল্প নিয়েছিলেন নেহরু
যেমন ধরুন, গ্রিন টি। স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য এই পানীয় এখন অনেকের কাছেই বেড টি-র বিকল্প। কিন্তু এই গ্রিন টি-র সঙ্গে পান্ডার নাকি গভীর সম্পর্ক। কীভাবে? পান্ডা বাঁশ খায় ঠিকই, কিন্তু তার ৩০ শতাংশ মাত্র হজম করতে পারে। বাকি মলের মাধ্যমে ত্যাগ করে দেয়। তবে, এই বাঁশের মধ্যে প্রচুর পুষ্টিগত উপাদান রয়েছে যা মানুষের পক্ষে উপকারী। তাই এই মলের মধ্যে মেশানো হয় গ্রিন টির চারা। এই চায়ের গুণাগুণ বেশি হওয়ার কারণও নাকি এটাই। আবার ধরুন, চিজ খেতে কে না ভালবাসে? কিন্তু ১১ ধরনের চিজ কালচার করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের পায়ের আঙুলের ভাঁজে, নাভির ভিতর অথবা মুখের ভিতরে যে জীবাণু পাওয়া যায় তা নাকি চিজের মধ্যেও রয়েছে। আর সসেজের ক্ষেত্রে তো মানুষের বর্জ্য পদার্থের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সসেজ তৈরি হয় ব্যাকটেরিয়ার উৎসেচন পদ্ধতির মাধ্যমে। আর এই ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করা হয় শিশুদের মল থেকেই। মানুষের বর্জ্য থেকে তৈরি করা হয় একরকম বিয়ারও। ভুট্টা থেকে এক ধরনের বিয়ার তৈরি হয় যার নাম ‘চিকা’। এই বিয়ার তৈরি করার সময় ভুট্টার দানাগুলি শ্রমিকরা থুতু দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। থুতুর মধ্যে যে উৎসেচক থাকে তা ভুট্টার মধ্যে থাকা স্টার্চের সঙ্গে মিশে বিয়ার তৈরি করতে সাহায্য করে। জাপানের একটি বিয়ার, উন কুনো কুরো আবার তৈরি হয় কফি বীজ থেকে। হাতিকে কফি বীজ খাইয়ে তার মল থেকে ওই বীজ সংগ্রহ করার পর তা দিয়ে এই বিশেষ বিয়ারটি তৈরি করা হয়।
পানীয়র কথাই যখন হচ্ছে, তখন কোপি লুয়াক কফির কথা না বললেই নয়। বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি এটি। মনমাতানো গন্ধ, এদিকে ক্যাফিনের পরিমাণও কম। কিন্তু এই কফি মোটেই সহজলভ্য নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক বিশেষ প্রজাতির বিড়াল রয়েছে যা কোপি লুয়াক কফি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। পরে এই বিড়াল মল ত্যাগ করলে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় এই কফির বীজ, আর তা দিয়েই তৈরি হয় এই অসামান্য পানীয়টি। আবার আইসক্রিম থেকে শুরু করে পুডিং, চুইং গাম— এই খাবারগুলি ক্যাস্টোরিয়াম থেকে বানানো হয়। বিভারের শরীরে থাকা ক্যাস্টর থলি থেকে ক্যাস্টোরিয়াম তৈরি হয়। পায়ুথলির কাছে এই ক্যাস্টর থলি থাকে। তাই ক্যাস্টোরিয়ামের সঙ্গে কিছু পরিমাণ মল অথবা মূত্রও থেকে যায়। ক্যাস্টোরিয়ামের গন্ধ একদম ভ্যানিলার মতো। তাই কিছু বানানোর সময় ভ্যানিলার গন্ধ আনতে এটি ব্যবহার করা হয়।
আরও শুনুন: বিয়ে করলেই থাকতে হবে ঘরজামাই! অদ্ভুত শর্তের জেরে বর জুটছে না গ্রামের ৩০০ তরুণীর
তাহলে দেখছেন তো, মানুষ খায় না এমন জিনিস খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল? তা সে যা থেকেই তৈরি হোক না কেন!