গ্রামের মূল বাসিন্দা মহিলারাই। ঘরে বাইরের সব কাজকর্মও সামলান তাঁরাই। আর তাই তাঁদের সিদ্ধান্ত, কোনও পুরুষ যদি এই গ্রামে এসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তবে মহিলাদের প্রাধান্য স্বীকার করে নিয়েই থাকতে হবে তাঁদের। কিন্তু গোল পাকিয়েছে সেই সিদ্ধান্তই। এই শর্ত মেনে নিলে তবেই যে গ্রামের কোনও যুবতীকে বিয়ে করার অনুমতি পাবেন কোনও পুরুষ। কারণ বিয়ের পর ওই গ্রামেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে হবে তাঁকে। আর এই নিয়মবিধির জেরেই ব্রাজিলের এই গ্রামে বিয়ের সুযোগ মেলে না অনেক মেয়েরই।
ব্রাজিলের ছোট্ট গ্রাম ‘নয়ভা ডো করডেইরো’-তে বাস করেন প্রায় ৬০০ মহিলা। তাঁদের মধ্যে ৩০০ জনই যুবতী। বিয়ের উপযুক্ত বয়সে পা রেখেছেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই যে কোনও টিনএজারের মতোই স্বপ্নের পুরুষটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখারও কমতি নেই তাঁদের। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক। দুয়ের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামেরই তৈরি করা এক আশ্চর্য নিয়ম। ঘরজামাই প্রথার মতোই, জামাইকে গ্রামেই রেখে দিতে চান এই গ্রামের অধিবাসীরা। আসলে এর নেপথ্যে রয়েছে এক দুঃখের কাহিনি।
জানা যায়, ১৮৯১ সালে গড়ে উঠেছিল মহিলা পরিচালিত এই গ্রাম। মারিয়া সেনহোরিনা ডি লিমা নামে এক তরুণীকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই জবরদস্তি মেনে নেবেন না বলেই স্বামীকে ছেড়ে ফের পিতৃগৃহে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু সমাজের নিয়ম বড় বালাই। বাড়িতে কেন, গ্রামেই আর ঠাঁই হয়নি ওই তরুণীর। তখন ‘নয়ভা ডো করডেইরো’ গ্রামে এসে কেবল মহিলাদের নিয়েই একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলেন তিনি। নতুন নিয়ম করেন, এই সম্প্রদায়ের মেয়েরা বিয়ের পরে কেউ শ্বশুরবাড়ি যাবেন না, স্বামীকে স্ত্রীর বাড়িতে এসে থাকতে হবে। মেয়েদের বিয়ের সূত্রে ঠাঁইনাড়া হওয়ার নিয়মটিরই প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা পিতৃতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলাও তো মুখের কথা নয়। তাই পরবর্তী কালেও দেখা গিয়েছে, এই নিয়ম মানতে আপত্তি জানিয়েছেন অনেক পুরুষ। আর সেই কারণেই, বিয়ের স্বপ্ন দেখলেও, বিয়ের আসর পর্যন্ত আর পৌঁছতে পারেননি এই গ্রামের অনেক তরুণীই।