হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে মাথা ঝিমঝিম। তারপর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছেন এক প্রৌঢ়া। কারণ জানেন? তাঁর স্বামী নাকি সদ্য অবসর নিয়েছেন, আর সেইজন্যই তাঁর শরীরে দেখা দিয়েছে এমন অসুস্থতা। একথা বলেছেন স্বয়ং চিকিৎসকেরাই। এমনটাও কখনো হতে পারে? আসুন শুনে নেওয়া যাক এক অদ্ভুত রোগের কাহিনি।
রিটায়ার্ড হাজব্যান্ড সিনড্রোম। অর্থাৎ স্বামী চাকরি থেকে অবসর নিলে এই রোগে আক্রান্ত হবেন স্ত্রীরা। এর আগে সুন্দর ছবি দেখতে গিয়ে অসুস্থতার কথা আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্য একজন মানুষের কাজে অবসরপ্রাপ্তি, তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । কীভাবে সম্ভব এমন? সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন চিকিৎসকেরাই।
আরও শুনুন: ঘটকালি করল শহরের যানজট, ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়েই মনের মানুষকে খুঁজে পেলেন ব্যক্তি
মাথাব্যথা থেকে আরম্ভ করে নানান শারীরিক অস্বস্তি নিয়ে এক মহিলা হাজির হন এক চিকিৎসকের কাছে। বেশ কিছু পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক তাঁকে আচমকাই প্রশ্ন করে বসেন, তাঁর স্বামী সদ্য অবসর নিয়েছেন কি না? উত্তরে সম্মতি জানান সেই মহিলা। কিন্তু ডাক্তারবাবুর এহেন প্রশ্নকে স্বাভাবিক ভাবেই বেশ অবান্তর বলে মনে হয় তাঁর। তখন চিকিৎসক বলেন, এই মহিলার মতো সমস্যা নিয়ে অনেকেই তাঁর কাছে এসেছেন। প্রত্যেকের দেহেই এমন অদ্ভুত অস্বস্তি তৈরি হওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাননি তিনি। কিন্তু প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একটি বিষয় অদ্ভুতভাবে মিলে গেছে। এঁদের সকলেরই স্বামী নাকি সদ্য অবসর নিয়েছেন। তারপরই সেই চিকিৎসক বুঝতে পারেন এই মহিলার শরীরেও ‘রিটায়ার্ড হাজব্যান্ড সিনড্রোম’ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রোগ। বিশেষ করে যাঁরা এতদিন একাই সন্তানপালন থেকে ঘরের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করে এসেছেন, তাঁদের স্বামীরা অবসর নিলেই, স্ত্রীদের শুরু হচ্ছে এমন সমস্যা।
সর্বপ্রথম জাপানের এক চিকিৎসক এই রোগের অস্তিত্ব টের পান। মধ্যবয়সি মহিলারা বেশিরভাগই এমন সমস্যা নিয়ে প্রায়শই তাঁর কাছে হাজির হতেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, জাপানে ৪৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিবাহের ২০ বছর পর বা তারও পরে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটেছে। শুনতে অবাক লাগলেও এর কারণ হিসেবেও রিটায়ার্ড হাজব্যান্ড সিন্ড্রোমকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা।
আরও শুনুন: হিন্দু রীতিতে পরালেন সিঁদুর, বেনারসের মন্দিরে বিয়ে সারলেন মুসলিম যুগল
কিন্তু কেন হয় এমন অদ্ভুত রোগ? তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা চিকিৎসাশাস্ত্রে নেই। তবে অনেকেই একে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন বলে মনে করেন। দীর্ঘদিন ধরে একই রুটিনে জীবনযাপন করার ফলে খুব সহজে সেই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না গৃহবধূরা। তাই অবসর গ্রহণের পর যখন স্বামী সারাদিন ঘরে থাকেন, তখন তাঁকে প্রায় অপরিচিত বলেই মনে হয় তাঁদের। আর একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকতে তো সমস্যা হবেই। প্রাথমিক ভাবে মারাত্মক কোনও ক্ষতি না হলেও এর ফলে দেখা দিতে পারে ক্রনিক ডিপ্রেশন। যার থেকে দানা বাঁধতে পারে নানান মনস্তাত্ত্বিক রোগ। আর সেটাই বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্তও গড়াতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।