কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলার ভয় পাই আমরা সকলেই। কিন্তু যদি এমন হয় যে, তাঁরা না হারালেও তাঁদের কথা আর মনেই পড়ছে না? এমনকি মুখ দেখেও আর চিনে ওঠা যাচ্ছে না পরিচিত মানুষটিকে? হ্যাঁ, ঠিক এমন পরিস্থিতিই তৈরি হতে পারে এক বিরল রোগে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এ এমনই এক রোগ, যেখানে রোজকার চেনা মানুষদের মুখ দেখলেও আর চিনতে পারা যায় না। কারও মুখ একবার দেখলে তো কথাই নেই, পরের মুহূর্তেই আর মনে থাকে না। এমনকি রোজ আয়নায় দেখা হয় যার সঙ্গে, ছবিতে চিনে ওঠা যায় না তাকেও। অর্থাৎ নিজের ছবি দেখলেও অবস্থাটা বিশেষ পালটায় না। না, স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার কথা বলছি না। কারণ অন্য কোনও স্মৃতি নয়, এই রোগে কোপ পড়ে কেবল মুখ চেনার উপরেই। এমনকি পুরনো কথা মনে রাখতেও সমস্যা হয় না। আর সেইজন্যেই, রোগটিকে চিনেও ওঠা যায় না চট করে। কেউ মনে করেন চোখের সমস্যা হচ্ছে, কারণ কণ্ঠস্বর শুনে, স্পর্শ করে বা অন্য স্মৃতির অনুষঙ্গ ধরিয়ে দিলে পরিচিত মানুষটিকে চিনে নিতে পারেন ওই ব্যক্তি। কেউ আবার ভাবেন এ হয়তো স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা। কিন্তু আসলে এটি মস্তিষ্কের একরকম বিরল রোগ। যার নাম ফেস ব্লাইন্ডনেস, অথবা ডাক্তারি পরিভাষায় প্রসোপ্যাগনোশিয়া।
আরও শুনুন: পরিবেশন করা হচ্ছে গোমাংস, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অভিযোগে গ্রেপ্তার রেস্তরাঁর কর্ণধার
কেন হয় এই রোগ? বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা যা দেখি, তার ছাপ থেকে যায় মস্তিষ্কে। তাই আগে দেখা কোনও কিছুকে পরে আবার দেখলে আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতিতে থাকা সেই ছবির ভাণ্ডার হাতড়ায়। মিল খুঁজে পেলে সেই মানুষ বা বস্তুটিকে আমরা চিনতে পারি। এই ইনফরমেশন প্রসেসিং-এর প্রক্রিয়াটি পুরোটাই ঘটে মস্তিষ্কের অ্যাসোসিয়েশন কর্টেক্সে। কিন্তু সেই অংশটি বিকল হয়ে গেলেই সমস্যা বাধে। তখনই শুরু হয় মুখ চিনতে না পারার উপসর্গ, তথা প্রসোপ্যাগনোশিয়া।
আরও শুনুন: প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্মদিনে ৫৬ পদ দিয়ে ‘থালি’, সঙ্গে ৮.৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা রেস্তরাঁর
এই রোগেরও আবার প্রকারভেদ রয়েছে। ব্রেন স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার, দুর্ঘটনার জন্য মাথায় চোট, অথবা কোনও ট্রমা, এমন বিভিন্ন কারণে অ্যাসোসিয়েশন কর্টেক্স বিকল হয়ে প্রসোপ্যাগনোশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন কেউ। একে বলা হয় অ্যাকোয়ার্ড প্রসোপ্যাগনোশিয়া। কিন্তু কোনোরকম অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা ছাড়াও, জন্ম থেকেই কারও অ্যাসোসিয়েশন কর্টেক্স অংশটি কাজ করে না, এমনটাও হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। একে বলা হয় কনজেনিটাল প্রসোপ্যাগনোশিয়া। এই আশ্চর্য ভুলে যাওয়ার অসুখ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্যের উপায় এখনও খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা। তবে বিশেষ কিছু পদ্ধতির সাহায্যে জীবনকে অনেকটা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর পথ খুঁজছেন তাঁরা। পাশাপাশি, স্মৃতিভ্রংশের অন্যান্য অসুখের মতো এই অসুখেও যে সহমর্মিতাটুকু বড় জরুরি, সে কথাও বারেবারেই মনে করিয়ে দেন তাঁরা।