গুজরাতের বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ মামলায় আজীবন কারাবাসের সাজা পাওয়া ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা দিবসেই। তাদের পরিবারের তরফে করা হয়েছে মিষ্টি বিতরণও। কিন্তু এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কী বলছেন ঘটনার ভুক্তভোগীরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শুনিয়েছিল আদালত। তবে ১৫ বছর পর মকুব হল সেই সাজা। স্বাধীনতা দিবসেই গোধরা জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বিলকিস বানো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে। আর ছাড়া পাওয়ার পর জেলের বাইরেই মিষ্টি খাইয়ে, পরিবারের লোকেদের পা ছুঁয়ে তাদের আশীর্বাদ নেওয়ার ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে সম্প্রতি। এতদিন পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পাশাপাশি এবার নতুন জীবন শুরু করার কথা ভেবেও খুশি তারা, এমনটাই জানিয়েছেন মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তিরা। যদিও এই প্রসঙ্গে সেভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিলকিস বানোর স্বামী ইয়াকুব রসুল। এই মুক্তির নির্দেশ সম্পর্কে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি বলেই জানিয়েছেন ইয়াকুব। তাঁর কথায়, “আমরা কেবল আমাদের প্রিয়জনদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতে পারি, ওই হিংসার জেরে যাদের আমরা হারিয়েছি। আমাদের মেয়ে সহ যাদের সেদিন হত্যা করা হয়েছিল, প্রত্যেককে প্রতিদিনই স্মরণ করি আমরা।”
আরও শুনুন: সদ্যোজাত কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হল মাটিতে , ‘বেটি বঁচাও’-এর উল্টো পথেই কি হাঁটছে দেশ?
২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ভয়াবহ হামলার শিকার হন বিলকিস বানো ও তাঁর পরিবার। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। এর পর তাঁর পরিবারের ১৪ জন-সহ তাঁদের দেবগড় বারিয়া গ্রামের মোট ১৭ জনকে খুন করা হয়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ২১ বছর বয়সের বিলকিস বানো-সহ তাঁর মা-বোনকে গণধর্ষণ করা হয়। কিন্তু এরপরেও সহায়সম্বলহীন বিলকিস বানো ও ইয়াকুব রসুল সুবিচার পাওয়ার আশায় আইনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে বম্বের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। বাকি ১১ জনের ক্ষেত্রে ওই শাস্তি কার্যকর করা হয়।
আরও শুনুন: কেউ শিকার গার্হস্থ্য হিংসার তো কেউ পাচারের, নারী নির্যাতন রুখতে একজোট এই ‘গুলাব গ্যাং’
গত ১৫ বছর কারাবাসের পর সম্প্রতি তাদের একজনের তরফে সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আরজি পেশ করা হয়েছিল। রাধেশ্যাম শাহ নামে ওই ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলে শীর্ষ আদালত। রাজ্য সরকারের তৈরি কমিটি ১১ জনের মুক্তির সুপারিশ করে। যার দরুন অবশেষে কারাগারের বাইরে পা রেখেছেন তারা। যদিও এর চেয়ে অনেক কম অপরাধ করেও সাজা মকুবের সুযোগ মেলেনি অনেক অপরাধীর, এই মর্মে সওয়াল করেছেন মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী শামশাদ পাঠান। এই নয়া রায়ের জেরে রাষ্ট্রের বিচারের প্রতি নির্যাতিতদের আস্থাও কমে যাবে, এমনটাই তিনি মনে করেন বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।