আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে বৃষ্টি। রং একেবারে গাঢ় লাল। দেখলে যে কেউ ভাববেন, আকাশ থেকে যেন রক্ত ঝরে পড়ছে। একবার নয়, কয়েক বছরের ব্যবধানে বার বার হয়েছে এমন কাণ্ড। কোথায় জানেন? আসুন শুনে নিই।
বর্ষাকালে আর পাঁচটা জায়গার মতো এখানেও নেমেছিল বৃষ্টি। প্রচণ্ড গরমের পর এই বৃষ্টি স্বস্তি দেবে এমনটাই ভেবেছিল সবাই। কিন্তু যা ঘটেছিল তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। বৃষ্টি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার রং একেবারেই সাধারণ ছিল না। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছিল সম্পূর্ণ লাল রঙের। ২০১২ সালের মাঝামাঝি এমন বৃষ্টি দেখে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন কেরলবাসী। এমনকি এই বৃষ্টির ফলে জামাকাপড়ের রং-ও নাকি পাল্টে গিয়েছিল। লাল বৃষ্টির পর হলুদ, সবুজ বা কালো রঙের বৃষ্টিও দেখা গিয়েছিল এই অঞ্চলে। শোনা যায়, এর আগে নাকি ১৮৯৬ সালেও এমন বৃষ্টি হয়েছিল কেরলে। প্রাথমিক ভাবে এর রহস্য বিজ্ঞান উন্মোচন করতে পারেনি। ফলে নানান কথা বলতে শুরু করেন স্থানীয়রা। কারও দাবি ছিল, কোনও ভয়ঙ্কর অশুভ প্রভাবে এমন বৃষ্টি পড়ছে। আবার কেউ বলেছিলেন পৃথিবীর অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে। পরে এর কারণ খুঁজে পাওয়া গেলেও, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্কের শেষ ছিল না।
আরও শুনুন: সীমানা পেরিয়ে এল শুভেচ্ছা, দক্ষ হাতে ভারতের জাতীয় সংগীতের সুর বাজালেন পাকিস্তানি শিল্পী
গবেষকেরা এর কারণ খোঁজার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। একদল গবেষকর দাবি ছিল, উল্কাপিণ্ডের বিস্ফোরণের কারণে হয়তো সে সময় বৃষ্টির জলের রং এমন হয়েছে। আবার গবেষকদের অন্য একটি দল মনে করেন, এর পিছনে উল্কাপিণ্ড বিস্ফোরণের কোনও হাত নেই। তাঁদের মতে, স্থানীয় কোনও শৈবাল গোত্রীয় জীব বাতাসে ভেসে থাকার ফলেই বৃষ্টির জল লাল বর্ণ ধারণ করেছিল। লাল বৃষ্টির নমুনা সংগ্রহ করে তাঁরা পরীক্ষা করেছিলেন। তাতেই নাকি পাওয়া গিয়েছিল এই শৈবাল মিশে থাকার তথ্য। তাঁরা এমনটাও দাবি করেন যে, প্রতি মিলিমিটার বৃষ্টির জলে প্রায় ৯০ লক্ষ্য আণুবীক্ষণিক কণিকা রয়েছে।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কেরলে রক্তবৃষ্টি হওয়ার আগে নাকি জোরালো শব্দ শোনা গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল আলোর ঝলকানি। এমন শব্দ যা শুধু কোনও বিমান বিস্ফোরণ হলেই হতে পারে। কিন্তু বিমান বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছিল এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তাহলে এই আওয়াজ কেন? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও পর্যন্ত অমীমাংসিতই থেকে গিয়েছে। অন্যদিকে গবেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এই শব্দই উল্কাপিণ্ডের বিস্ফোরণের শব্দ। তাঁদের মতে, বিস্ফোরণের ফলে সেখান থেকে লাল কণিকা বেরিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই তথ্যের উপরে অবশ্য নিজেরাই ভরসা করতে পারেননি গবেষকরা।
আরও শুনুন: হিংসা নয় চাই সম্প্রীতি, জাহাঙ্গিরপুরীতে জাতীয় পতাকা হাতে একযোগে মিছিল হিন্দু-মুসলমানদের
কেননা এই মতের বিপক্ষে একটি যুক্তি জোরালো হয়েছিল। সেটি হল- সত্যি সত্যিই যদি এটা উল্কাপিণ্ডের বিস্ফোরণের শব্দ হতো, তাহলে উল্কাপিণ্ডের অংশগুলি কেন শুধু ওই জায়গাটির মধ্যেই পড়বে? কেরলের অন্যান্য জায়গাতেও তা ছড়িয়ে পড়ার কথা। অর্থাৎ বহু জায়গাতেই এই তথাকথিত রক্তবৃষ্টি হতে পারত। কিন্তু তেমনটা হয়নি। আবার অনেকেই বলে থাকেন, কেরলে যখনই রক্তবৃষ্টি হচ্ছিল ঠিক সেই সময় ফিলিপিন্সে এক আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়েছিল। সেই আগ্নেয়গিরির অ্যাসিটিক পদার্থ কেরলের অঞ্চলে এসে পৌঁছায়। যার জন্য কেরালাতে হয় রক্তবৃষ্টি। আবার অনেকে বলেছেন, এর জন্য দায়ী আরবের মরুভূমির ধূলিকণা। সেই ধূলিকণা নাকি কেরলের আকাশে মেঘ তৈরি করেছিল আর তা থেকেই নাকি এমন রক্তবৃষ্টি। একেক রকম গবেষণা একেকটি তথ্যকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আসল ঘটনা যে কী ঘটেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেরলের এই রক্তবৃষ্টি তাই রহস্যজনক বৃষ্টি হয়েই থেকে গিয়েছে।