গা ছমছমে, আনাচেকানাচে ভূতের গল্প ছড়িয়ে থাকা এমন অনেক জায়গার কথাই শোনা যায়। পুরনো কলকাতার হেস্টিংস বা আকাশবাণী ভবন, এইসব জায়গা নিয়েও ভূতের গল্প কম নেই। তবে রাজস্থানের এই কেল্লাটি বলে বলে টক্কর দেবে সেসব ভূতের গল্পকে। দেশের অন্যতম ভৌতিক জায়গা হিসেবে নাম রয়েছে এ কেল্লার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই গল্পই।
রাজস্থানের প্রায় সমস্ত কেল্লাই ইতিহাস আর গল্পে ঠাসা। পুরনো রাজা-রাজরার কত রকম কাহিনি আজও ছড়িয়ে আছে প্রাসাদের আশপাশে। কোথাও আজও শুনতে পাওয়া যায় ঘুঙুরের বোল, অন্দরমহল থেকে কোথাও বা ভেসে আসে অচেনা কণ্ঠস্বরের গুঞ্জন। কোথাও বা ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা যায় কান পাতলে। এসব নিয়ে জমে ওঠে ভূতের গল্প।
তবে রাজস্থানের এই কেল্লা শুধু ভারতেরই নয়, গোটা মহাদেশের সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম। ষোড়শ শতকে এই ভানগড় কেল্লা তৈরি করেন রাজা ভগবন্ত দাস। তিনি ছিলেন মাধো সিংহের কনিষ্ঠ পুত্র। দিল্লি থেকে এই কেল্লার দূরত্ব ২৩৫ কিলোমিটার মতো। জয়পুর বিমানবন্দর থেকেও খুব বেশি দূরে নয় এই কেল্লা।
আরও শুনুন: রক্ষা করেন স্বয়ং মহেশ্বর, পালিয়ে বিয়ে করা যুগলদের আশ্রয় দেয় দেশের এই মন্দির
নানা গল্প আজও ভেসে বেড়ায় কেল্লার বাতাসে। কেউ বলেন, এই ভানগড় কেল্লা চত্বরে নাকি এককালে থাকতেন বাবা বালক নাথ নামে এক সাধু। তাঁর স্বপ্ন ছিল, তাঁর বাড়িটি হবে এলাকায় সবচেয়ে উঁচু। সেই স্বপ্নে এতটাই মশগুল ছিলেন তিনি, যে এ-ও অভিশাপ দিয়েছেলেন, তাঁর বাসস্থানের উপরে অন্য কোনও বাড়ির ছায়া পড়লে গোটা শহর ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই অভিশাপ নাকি আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে এই কেল্লার আনাচে-কানাচে।
আরও বেশ কিছু কাহিনি প্রচলিত রয়েছে কেল্লা নিয়ে। ভানগড়ের রাজকুমারী রত্নাবতীর প্রেমে পড়েন এক ব্যক্তি। তিনি আবার ছিলেন কালোজাদু প্রসিদ্ধ। রাজকুমারীর মন পেতে তিনি নাকি বিশেষ জাদু-শরবত খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। যা একবার খেলেই জাদুকরের প্রতি আকৃষ্ট হবেন রাজকুমারী। তবে রত্নাবতী তা না-খেয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন একটি বিশাল পাথরের উপরে। আচমকা সেই পাথরটি নাকি ঘুরতে শুরু করে। আর ঘুরতে ঘুরতে তা গিয়ে পড়ে সেই জাদুকরের উপরেই। আর তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। তবে মৃত্যুর আগে নাকি গোটা শহরকে অভিশাপ দিয়ে গিয়েছিলেন সেই যাদুকর। আর সেই শাপের হাত থেকে আজও মুক্তি পায়নি কেল্লা
আরও শুনুন: পাহাড় যেন ভাসছে! আছে দীর্ঘতম কাচের সেতুও, আশ্চর্য এই জায়গা কোথায় জানেন?
এই কেল্লায় ঘুরতে এসে অস্বাভাবিকতা অনুভব করেছেন বহু পর্যটকই। প্রাসাদের ভিতরে পা দিতেই নাকি একটা অদ্ভুত অনুভূতি চেপে ধরেছে তাঁদের। যা ভাষায় বর্ণনা করা দুষ্কর। স্থানীয়দের মুখে প্রায়ই একটা গল্প শোনা যায়। একবার নাকি তিন বন্ধু দুঃসাহস দেখিয়ে ওই প্রাসাদে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তার ফল হয়েছিল ভয়াবহ। সেই রাতেই একজন কেল্লার একটি কুয়োয় পড়ে যান। তাঁকে কোনও মতে বাঁচিয়ে নিয়েছিলেন বাকি দুজন। কিন্তু তার পরেই ঘটে ভৌতিক ঘটনা। জখম বন্ধুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আশ্চর্য এক দুর্ঘটনায় মারা যান সকলেই। যাঁরাই জোর করে দুর্গে ঢোকার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা কেউ নাকি ফেরেননি আর। তাঁদের সঙ্গে কী হয়েছে, তা আর জানা যায়নি শেষপর্যন্ত।
তাই সূর্যাস্তের পরে এই ভানগড় দুর্গে ঢোকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তরফেও সেখানে টাঙানো রয়েছে এ সংক্রান্ত সতর্কতা বোর্ড। আদৌ ভূত আছে কি নেই, তা তো যুক্তি বা বিশ্বাসের প্রশ্ন। তবে এই দুর্গে যে কিছু একটা নেগেটিভ শক্তি কাজ করে, তা একবাক্যে মেনেছেন বাঘা বাঘা সাহসীরাও।