‘অবতার’ নামে সেই হলিউডি ‘সাইফাই’ সিনেমাটির কথা ভোলেননি নিশ্চয়ই। তাহলে সেই সিনেমায় দেখানো ভাসমান পাহাড়গুলির কথাও নিশ্চয়ই মনে আছে। ছবির সেই হেলেলুজা পাহাড়ের ছিল আশ্চর্য চৌম্বকীয় ক্ষমতা। কী ভাবছেন, সে সবকিছুই আসলে কল্পনা? কিন্তু সিনেমার সেই ভাসমান পাহাড় নাকি তৈরি হয়েছিল বাস্তবের একটি জায়গা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই। কোথায় রয়েছে সেই আশ্চর্য জায়গা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সিনেমা মানেই ভিএফএক্স আর একগাদা প্রযুক্তির ব্যবহার। আর সেসবের সাহায্যে কী না করা যায়? ঘোর কল্পনাকেও বানিয়ে ফেলা যায় নিদারুণ বাস্তব। তবে ওই যে অ্যারিস্টটল বলে গিয়েছেন, শিল্প অনুকরণ মাত্র। তাই সেই সব কল্পনার মধ্যেও কোথাও কোথাও থেকে যায় বাস্তবের ছাপ। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয়েছিল হলিউডি সাইফাই ছবি ‘অবতার’। কিছুদিনের মধ্যে মুক্তি পেতে চলেছে সেই ছবির সিকুয়েলও। সেই ‘অবতার’ সিনেমায় দেখানো আশ্চর্য ভাসমান পাহাড় ‘হেলেলুজা’-র কথা ভোলেননি নিশ্চয়ই। সেই পাহাড় নাকি বাস্তবের একটি জায়গা থেকে অনুপ্রাণীত হয়েই তৈরি করেছিলেন নির্মাতা।
আরও শুনুন: অর্ধেক মানবী অর্ধেক উট, সার্কাসের দুনিয়ায় জনপ্রিয় এই ‘ক্যামেল গার্ল’ আসলে কে?
ভাবছেন তো কোথায় রয়েছে সেই আশ্চর্য পাহাড়? চিনের হুনান প্রদেশের ঝাং ঝিয়া ঝি জাতীয় উদ্যান। সেখানে পৌঁছলে মনে হবে, এ যেন চোখের সামনে অবিকল সিনেমার দৃশ্য। বিরাট বিরাট দৈত্যাকারের পাথরের পিলারের মতো পাহাড়, ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল ‘অবতার’ ছবিতে। তবে পার্থক্য একটাই। এখানে পাহাড় মোটেই ভাসে না। জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরে ক্ষয় হতে হতেই এমন আশ্চর্য আকার নিয়েছে সেখানকার পাহাড়গুলি। তার উপর গজিয়েছে গাছ। ঘন জঙ্গল বললেও ভুল হবে না। আসলে এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত জলীয়বাষ্পপূর্ণ। যা ঘন জঙ্গল তৈরির পক্ষে একেবারে আদর্শ। শুধু ঝাং ঝিয়া ঝি জাতীয় উদ্যানেই নয়, চিনের বহু জায়গাতেই এমন ঘন জঙ্গলের ঘনঘটা।
আরও শুনুন: সানগ্লাসের আবির্ভাব বিচারকদের প্রয়োজনেই, নেপথ্যের কারণ চমকপ্রদ
হুনান প্রদেশের এই জাতীয় উদ্যানটি দেখে নাকি মুগ্ধ হয়েছিলেন অবতার ছবির নির্দেশক জেমস ক্যামেরন। আর সেখান থেকেই সিনেমায় ওই ভাসমান হেলেলুজা পর্বত তৈরির ভাবনা পান তিনি। এমনকি ২০১০ সালের জানুয়ারিতে পার্কের দক্ষিণ দিকের একটি ৩,৫৪৪ ফুট পিলারের নামও বদলে ফেলা হয়। সিনেমার কথা মনে করে সেটির নাম রাখা হয়েছে ‘অবতার হেলেলুজা মাউন্টেন’। আর সেই হেলেলুজা পাহাড়কে চাক্ষুষ করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। ১২ হাজার একর জায়গা নিয়ে গঠিত এই জাতীয় উদ্যানটি চিনের প্রথম জাতীয় উদ্যান, যেটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮২ সালে। তবে ‘অবতার’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এই জাতীয় উদ্যানের জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। হলিউডের সব ছবি চিনে মুক্তি পায় না সাধারণত। তবে ‘অবতার’ ছবিটি তার ব্যতিক্রম। এখনও পর্যন্ত চিনের বাজার মাত করা হলিউড ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম সিনেমা এটি। সম্ভবত ঝাং ঝিয়া ঝি জাতীয় উদ্যানের সঙ্গে এই আশ্চর্য যোগই আরও হলমুখো করেছিল দর্শকদের। ২০১৬ সালে এখানে পৃথিবীর দীর্ঘতম ও উচ্চতম গ্লাসসেতুর উদ্বোধন হয়। সেটির টানেও এখানে আসেন অজস্র পর্যটক।