বাড়ির অমতে বিয়ে করে সমস্যায় পড়েন অনেকেই। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে তো কথাই নেই। আবার নিজের বাড়িতে ঠাঁই মিলবে কি না, সেই নিয়ে থাকে বেশ সন্দেহ। কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে এমনই এক মন্দির যা এই ধরনের যুগলদের প্রধান আশ্রয়স্থল। পালিয়ে বিয়ে করে অনেকেই এই মন্দিরে গিয়ে আশ্রয় নেন। সাদরে তাঁদের গ্রহণ করেন মন্দির সংলগ্ন গ্রামবাসীরা। কোথায় আছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কতই না অজানা কাহিনি। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ এমনই এক জায়গা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যয়ের পাশাপাশি অনেক অজানা তথ্যের ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে এই অঞ্চলে। পর্যটন ক্ষেত্রেও এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অবশ্যই উত্তরভারতের হিমাচল প্রদেশকে রাখা যেতে পারে। তবে সব থেকে বিখ্যাত হল, এখানকার মন্দিরগুলি। অসাধারণ কারুকাজ আর ইতিহাসের বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায় বহন করে নিয়ে চলেছে এই হিমাচল প্রদেশ।
আরও শুনুন : হিরোশিমা বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু ১০ বছর পর, যুদ্ধের পালটা শান্তির প্রতীক সেই কিশোরী
এখানকারই সাঙ্গর গ্রামের শাংচুল মহাদেব মন্দিরটি এক বিশেষ প্রথার জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। অনেকে বলেন, এই মন্দিরের সঙ্গে নাকি যোগ রয়েছে মহাভারতের-ও। শোনা যায় নিভৃতবাসে থাকার সময় পাণ্ডবরা এখানে এসে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।
এই মন্দিরে প্রেমিক যুগলের রক্ষাকারী স্বয়ং মহেশ্বর। এর পিছনেও রয়েছে এক ইতিহাস। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী পাণ্ডবদের নাকি রক্ষা করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন এই গ্রামে পাণ্ডবরা এসে পৌঁছালে তাঁদের পিছু নেয় কৌরবরা। তাঁরাও এসে উপস্থিত হয় এই গ্রামেই। তখন পাণ্ডবরা উপায় না খুঁজে পেয়ে মহাদেবের মন্দিরে এসে আশ্রয় নেন। সেখানে আর প্রবেশের অধিকার পায়নি কৌরব দল। মহেশ্বর স্বয়ং আবির্ভূত তাঁদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনিই নাকি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বলে যান, এই গ্রামে আশ্রয় নেওয়া সকলকেই রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁর। সেই থেকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে এই রীতি পালন করে আসছে গ্রামবাসীরা।
আরও শুনুন: ভারতের হিজাব বিতর্কে ছিল সমর্থন, আল কায়দা প্রধানের নিকেশে মিলল ‘সুবিচার’, বললেন ওবামা
গ্রামের মানুষ দাবি করেন, এখানকার সব আইনকানুন মহাদেবের সৃষ্টি। তাই সারা গ্রামের মানুষ একটু ভিন্নভাবেই জীবনযাপন করে এখানে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই গ্রামের মন্দিরটিতে আশ্রয় নিতে পারে প্রেমিক-প্রেমিকারা। তাঁদের বিয়ের ইচ্ছা থাকলে গ্রামের মানুষই দায়িত্ব নিয়ে সবটা সম্পন্ন করান। আর তখন বাইরের কারও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। এমনকী এই গ্রামে পুলিশকেও অনুমতি নিয়েই ঢুকতে হয়। স্থানীয় রীতিকে সম্মান জানিয়ে তাঁরাও মেনে নেন এই নিয়ম। বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা কোনও যুগলের বাড়ির লোক যদি এসে তাঁদের নিয়ে যেতে চান, তাহলে গোটা গ্রাম ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকাতে। তবে এইসব কিছুর পাশাপাশি এই মন্দিরে রয়েছে আরও কিছু নিয়ম। গোটা গ্রামেই সেই নিয়ম মেনে চলা হয়। যেমন কোনও অস্ত্র নিয়ে এই গ্রামে প্রবেশাধিকার নেই কারও। একইসঙ্গে মদ্যপান ধূমপান নিষিদ্ধ। কোনরকমের চামড়ার জিনিস ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এই গ্রামে। প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই মন্দির সত্যিই এক আশ্চর্য জায়গা। তেমনই আশ্চর্য তার নিয়মকানুন। পুজো আর প্রেমের মিলেমিশে যাওয়ার এমন নমুনা মুগ্ধ করে সকলকে।