চাকরি পাওয়ার শর্ত প্রধানত একটিই। থাকতে হবে সুডৌল স্তন। পাশাপাশি মুখে সুন্দর হাসি থাকাটাও আবশ্যক। হ্যাঁ, কর্মী নিয়োগের জন্য এমন বিজ্ঞাপনই দিয়েছে একটি সংস্থা। আর তা নিয়েই শোরগোল পড়েছে নেটদুনিয়ায়। তবে কি শরীরসর্বস্বতাই কোথাও গিয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞাপন মানেই দাবিদাওয়ার নিরাবরণ প্রকাশ। যাবতীয় চাহিদাকে কোনও আবরণ না রেখে, কার্যত নির্লজ্জভাবেই প্রকাশ করে বিজ্ঞাপন। কমবেশি যে কোনও বিজ্ঞাপনের দিকে তাকালেই এ কথার সাক্ষ্য মিলবে। তবে এই বিশেষ বিজ্ঞাপনটি বোধহয় সে সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। আর তার জেরেই নেটদুনিয়ায় উঠেছে নিন্দার ঝড়।
আরও শুনুন: স্তন ছোট বলেই বাদ পড়েছেন সিনেমা থেকে, বলিপাড়ার গুপ্তকথা ফাঁস করলেন রাধিকা
ঠিক কী বলা হয়েছে সেই বিজ্ঞাপনে?
বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ডের একটি পানশালা। আংশিক সময়ের একজন কর্মীর খোঁজ করছিল পানশালাটি। স্বাভাবিকভাবেই, সেই কর্মীর কী কী যোগ্যতা থাকা আবশ্যিক, বিজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করারই কথা। আর ঠিক তা-ই করেছে সংস্থাটি। কিন্তু গোল বেধেছে তাতেই। এমনিতে কোনও ব্যক্তিকে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতার ভিত্তিতেই পরখ করা হয় তাঁকে। বিজ্ঞাপনেও উল্লেখ করে দেওয়া থাকে সেই বিষয়গুলি। কিন্তু এই পানশালার দেওয়া বিজ্ঞাপনটিতে কর্মীর মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য চাওয়া হয়েছে, তাতে শিক্ষাগত কি পেশাগত যোগ্যতার কোনোরকম আভাস মাত্র নেই। বরং কেবলমাত্র তাঁর শারীরিক গঠন, এককথায় যৌন আবেদনের দিকটিকেই এখানে যোগ্যতার মাপকাঠি বলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞাপনটিতে কোনোরকম রাখঢাক না করেই স্পষ্ট বলা হয়েছে, সুডৌল স্তন, মিষ্টি হাসি আর সুন্দর ব্যবহার- এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই কাম্য। এমনকি স্তনের মাপ পর্যন্ত উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে। যদিও বিজ্ঞাপনের একেবারে শেষে উল্লেখ রয়েছে যে পুরুষেরাও এই চাকরির জন্য আবেদন জানাতে পারেন, তবে বিজ্ঞাপনের ভাষা থেকে এ কথা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে মূলত মেয়েদেরকেই এই চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে চায় সংস্থাটি। তবে তা নারী ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত কোনও বড় উদ্দেশ্যের কারণে নয়। স্রেফ ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্যেই মেয়েদের কার্যত পণ্য করে তুলতে চায় পানশালাটি। বারে যে পুরুষেরা মদ্যপান করতে আসবেন, তাঁদের সামনে যৌন আবেদনময়ী কোনও মহিলাকে রেখে পরোক্ষে পানশালার আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলাই সংস্থাটির লক্ষ্য।
আরও শুনুন: স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর কৃষ্ণের ছবি, বিতর্কের মুখে ‘মাসুম সওয়াল’ ছবির পোস্টার
স্বাভাবিকভাবেই এই বিজ্ঞাপনটি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। মেয়েদের পেশাগত যোগ্যতা না দেখে কেন খালি শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিশেষ করে ‘মেল গেজ’ অর্থাৎ নারীকে কেবল শরীরের নিরিখে মাপার যে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, এই বিজ্ঞাপন তাকেই কার্যত মান্যতা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন সকলে। যেখানে শারীরিক সৌন্দর্যের গতে বাঁধা মাপকাঠি ছাপিয়ে মানবিক সৌন্দর্যের অভিমুখে পৌঁছনোই লক্ষ্য হওয়া উচিত, এহেন শরীরসর্বস্বতার বিজ্ঞাপন সেই লক্ষ্যকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে- এমনটাই মত নেটিজেনদের।