অন্তর্দৃষ্টির কথা তো শুনেছি আমরা। তা সেই ক্ষমতা সকলের থাকে না। কুকুরের তো থাকার কথাই নয়। তবে কুকুরের রয়েছে অন্য এক আশ্চর্য ক্ষমতা। শুধু চোখ দিয়েই নয়, নাক দিয়েও নাকি দেখতে পায় তারা। সম্প্রতি এমনই দাবি করলেন একদল বিজ্ঞানী। কীভাবে সম্ভব হয় এমন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কথাই।
মহাভারতে পান্ডবদের মহাপ্রস্থানের পথে সঙ্গী হয়েছিল একটি কুকুর। প্রিয় পোষ্য হিসেবে জবাব নেই এই প্রাণীটির। আদুরে, বিশ্বাসী এবং এমন প্রভুভক্ত পোষ্য বোধহয় পৃথিবীতে আর দুটি নেই। শুধু পোষ্য হিসেবেই নয়, সাহস এবং ক্ষিপ্রতাতেও কিছু কম যায় না প্রাণীটি। তেমনই তীক্ষ্ণ এদের নাক। গন্ধ শুঁকে তাই অনেক কিছুই ঠাহর করে ফেলে কুকুরেরা। যার জন্য পুলিশ কিংবা সামরিক বাহিনীতে রীতিমতো নিয়োগ করা হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরদের। ব্যবহার করা হয় রহস্যের জট খুলতেও। নাক দিয়ে শুধু গন্ধই নয়, দেখতেও নাকি পায় কুকুরেরা। সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য দাবি করেছেন একদল বিজ্ঞানী।
আরও শুনুন: কুমিরের বিয়ে থেকে বরের গলায় সাপের মালা! অদ্ভুত সব ঘটনায় তাক লেগেছে বিশ্ববাসীর
অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই শুনে? তবে নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় সম্প্রতি উঠে এসেছে এমনই তথ্য। তাঁরা কুকুরের মস্তিষ্কের বিশেষ একটি ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন গবেষণায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, কুকুরের নাকের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে তাদের অক্সিপিটাল লোব-এর। আর এই অক্সিপিটাল লোবই মূলত দৃষ্টিশক্তির জন্য দায়ী। নাকের মধ্যে থাকা স্নায়ুর সঙ্গে এর যোগ থাকায় নাক দিয়েও কিছুটা দেখতে পায় কুকুর। দৃষ্টিহীন কুকুরেরাও নাকি এর মাধ্যমেই আশপাশের অনেক কিছু মালুম করে ফেলে।
আর কীভাবে তার এমনটা করে, সে বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে গবেষণায়। সাধারণত আমরা অন্ধকারে প্রায় কিছুই ঠাহর করতে পারিনা। কিন্তু অন্ধকারে বিশেষ অসুবিধা হয় না কুকুরদের। তাদের সব কটি ইন্দ্রিয় এতটাই সজাগ যে কেউ আশেপাশে পা রাখা মাত্রই টের পেয়ে যায় তারা। ব্যক্তি যদি পরিচিত হন, তবে তো কথাই নেই। গন্ধ শুঁকেই তাঁদের অনেকটা চিনে ফেলতে পারে কুকুর। কিন্তু অপরিচিত কেউ হলে আর রক্ষে নেই। অমনি শুরু হয় তর্জনগর্জন। আর কুকুরের এই গুণটির জন্যই পাহারাদার হিসেবেও জবাব নেই তাদের। আসলে ঘ্রাণ এবং নাক দিয়ে দেখার ক্ষমতা, এই দু’টো শক্তিই তারা ব্যবহার করে রাতের অন্ধকারে।
আরও শুনুন: ঘুম থেকে উঠলেই বেড়ে যায় মানুষের উচ্চতা, আজগুবি দাবি নয়, বলছে বিজ্ঞানই
এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকে জনসন জানিয়েছেন, দৃষ্টিহীন কুকুরদের দেখেই তাদের মাথায় এই গবেষণার কথা আসে। চোখে দেখতে না পেলেও কিছু কুকুর দিব্যি খুঁজে আনতে পারে দূরে ছুড়ে দেওয়া কোনও খেলার বল। শুধুমাত্র গন্ধ শুঁকে বোধহয় এ কাজ এতটা নিখুঁত ভাবে সম্ভব নয়। শুরু হয় গবেষণা। কুকুরের শরীরে বিশেষ কিছু অংশ পরীক্ষানিরিক্ষা করতে তাঁরা সাহায্য নেন MRI-এর। আর তাতেই ধরা পড়েছে আশ্চর্য এই বিষয়টি। অন্য আর কোনও প্রাণীর এই ক্ষমতা আদৌ থাকে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের ওই দলটির।