কথায় বলে necessity is the mother of invention। তবে পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিসই চলছে রমরমিয়ে, যা আসলে আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল ভুলবশত। আর সেসব জিনিসই হয়ে উঠেছে মানবজীবনে ভীষণ দরকারি। কী কী রয়েছে সেই তালিকায়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে আরও সহজ করেছে মানুষ। ক্রমশ এগিয়েছে আরও উন্নততর সভ্যতার দিকে। কিন্তু জানেন কি, এসবের ফাঁকে এমন অনেক জিনিসপত্রেরই হদিস মিলেছে, যা আসলে আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল ভুলবশত। পেনিসিলিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধটি যে ভুলবশত আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, তা তো অনেকেরই জানা। তেমন ভাবেই ভুলবশত আবিষ্কার হয়েছে এমন অনেক জিনিসই, যা ছাড়া হয়তো আজ জীবনকে কল্পনা করাও কষ্টকর। সেই তালিকায় কী কী রয়েছে, আসুন সেই গল্পই শোনাই আপনাদের।
আরও শুনুন: মাধ্যাকর্ষণ থেকে ছানি অপারেশন – ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এইসব আবিষ্কার বিস্মিত করেছে দুনিয়াকে
প্রথমেই তালিকায় রয়েছে আলুর চিপস। আট থেকে আশি, কার না ভাল লাগে মুচমুচে এই লোভনীয় স্ন্যাকসটি। কিন্তু জানেন, এই লোভনীয় খাবারটি আসলে আবিষ্কার হয়েছিল ভুল করে। ১৮৫৩ সালে নিউ ইয়র্কের এক রেস্তঁরায় এক বার এক ব্যক্তি নাকি আলু ভাজা অর্ডার করেন। কিন্তু নরম আর মোটামোটা আলু ভাজা খেয়ে বেজায় চটে যান তিনি। বেয়ারার হাত দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন পদটি। তাঁর অনুরোধেই পাতলা পাতলা আলু ভেজে নুন মাখিয়ে পরিবেশন করেন রাধুনীরা। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আলুর চিপসের যাত্রা।
তারপর ধরুন, রান্নাঘর আলো করে থাকা মাইক্রোওভেন যন্ত্রটি। এটিও আদতে আবিষ্কার হয়েছিল ভুল করেই। ১৯৪৫ন সালে পার্সি স্পেন্সার নামে এক ব্যক্তি মাইক্রোওয়েভ নির্গতকারী ম্যাগনেট্রন নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা করছিলেন। হঠাৎই খেয়াল করেন তাঁর পকেটের থাকা চকলেটটি গলে পাঁক হয়ে গিয়েছে। ঘটনাটি তলিয়ে ভাবতে গিয়েই মাইক্রোওভেনের ভাবনা আসে তাঁর মাথায়।
শক্তিশালী আঠা বানাতে গিয়ে স্টিকি নোটস আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন স্পেন্সার সিলভার নামে এক বিজ্ঞানী। যা আজকাল অফিসপত্তর থেকে শুরু করে বাড়িতে, বহুল ব্যবহৃত একটি জিনিস। শুধু কি তাই কর্নফ্লেক্স নামক এই জনপ্রিয় খাবারটিরও আবিষ্কার কিন্তু দুর্ঘটনাজনক ভাবেই। কেলগ ব্রাদার জন এবং উইল নাকি ভুল করে একদিন কিছুটা সিদ্ধ ভুট্টার দানা স্টোভে বসিয়ে রেখে চলে যান। ফিরে এসে পাঁপড়ের মতো একধরনের জিনিস দেখতে পান তাঁরা, যা আসলে ছিল আজকের কর্নফ্লেক্স।
আরও শুনুন: দুর্ঘটনার ফলেই দুনিয়া পেয়েছিল প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক! জেনে নিন সেই চমকপ্রদ গল্প
আজকাল ননস্টিক বাসনপত্তর ছাড়া রান্নাবান্নার কথা ভাবাই যায় না। সেই ননস্টিক বাসনপত্তরও কিন্তু তৈরি হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ করেই। বাতাসের ওজনস্তরের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বা সিএফসি। সেই সিএফসি নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা করতে গিয়েই আবিষ্কার হয় এই টেফলন বা ননস্টিক প্যানের। প্রথমে সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত হলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ রান্নাঘরেও।
দেশলাই কাঠিরও আবিষ্কার হয়েছিল কিন্তু দুর্ঘটনাবশতই। জন ওয়াকার নামে এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাসানিক মাখানো একটি কাঠিকে আগুনে ফেলে দিয়েছিলেন ভুল করে। সেটা জ্বলে উঠতেই মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায় তাঁর। সেখান থেকেই ১৮২৬ সালে আবিষ্কার হয় দেশলাই কাঠির।
মানবশরীরে হাড়ের অবস্থা বুঝতে এক্স রে ছাড়া গতি নেই। এই এক্স রে ছবিরও আবিষ্কার হয়েছিল ভুল করেই। ১৮৯৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানী উইলহেলম কনডার রন্টজেন ক্যাথোড রশ্মির টিউব নিয়ে কাজ করছিলেন। সে সময় টিউবটিকে তিনি মোটা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেন। সেখান থেকে নতুন ধরনের রশ্মি বেরিয়ে আসতে দেখে সেটি নিয়ে আরও পরীক্ষানিরিক্ষা শুরু করেন। দেখেন সেই রশ্মি বেশির ভাগ বস্তু ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে, শুধু তাই নয়, ছাড়তে পারে তার ছাপও। সেখান থেকেই রন্টজেন আবিষ্কার করেন এক্স রে-র।
কোকাকোলা নামক এই উপাদেয় পানীয়টিও রয়েছে সেই ভুলের তালিকায়। আটলান্টার এক রাসায়নিক বিজ্ঞানী জন পেম্বারটন মাথাধরার ওষুধ তৈরি করতে গিয়ে হঠাৎ করেই বানিয়ে ফেলেছিলেন পানীয়টি। যা পরে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গোটা পৃথিবী জুড়ে। ঠিক তেমন ভাবেই আবিষ্কার হয়েছিল ইঙ্কজেট প্রিন্টারের। ক্যানন সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার নাকি ভুল করে নিজের কালির পেনের উপরে গরম একটি ইস্ত্রি বসিয়ে রেখে চলে যান। তাপের ফলে কালির পেনটির মুখ থেকে কালি বেরোতে শুরু করে হুড়মুড়িয়ে। সেখান থেকেই ইঙ্কজেট প্রিন্টার তৈরির ভাবনা খুঁজে পান তিনি।
আরও শুনুন: আপেল থেকেই তৈরি হবে ‘প্লাস্টিক’, তাক লাগানো আবিষ্কার বাঙালি বিজ্ঞানীদের
এমন অনেক জিনিসই দুর্ঘটনাবশত তৈরি হয়ে গিয়েছে পৃথিবীতে, যাকে ছাড়া আজকের জীবন কল্পনা করাও কঠিন। আর সে সমস্ত জিনিসের কৃতিত্বই বোধহয় যায় সেইসব ভুলের ঘাড়ে। কাজ করতে গেলে ভুল তো হয়ই। তবে সেই ভুলের থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই বোধহয় আসল কথা। অন্তত এই সব আবিষ্কারের গল্প তো সে কথাটাই মনে করিয়ে দেয় আরও একবার।