মাত্র ১৯ বছর বয়সেই স্বামীকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের কাছে হার মানতে নারাজ এই মহিলা। আর নিজের সেই অদম্য জেদকেই তাঁর মতো আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। সেই ব্রত নিয়েই এবার পথে নামলেন কেরলের মেয়ে কৃষ্ণা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
দেশরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকেন যে সেনারা, তাঁদের জীবন যেন ঝুলে থাকে একটা সরু সুতোর উপর। যে কোনও মুহূর্তে ছিঁড়ে যেতে পারে সেই সুতো। যেমনটা ঘটেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর আধিকারিক শিবরাজের সঙ্গে। এক দুর্ঘটনায় নিমেষেই শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর জীবন। আর তাঁর জীবনের সঙ্গে সঙ্গে থমকে দাঁড়িয়েছিল আরও দু-দুটো জীবন। একজন তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা, যাঁর বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর। আর আরেকজন তাঁদের মেয়ে, মাত্র তিন মাস আগেই যে দেখেছিল পৃথিবীর আলো। সৈনিকদের পরিবারের ক্ষেত্রে এহেন মর্মান্তিক ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে যা অভিনব, তা হল, এই পরিবারটির পরবর্তী জীবনধারা। আর পাঁচজনের মতো শোকের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি শিবরাজের স্ত্রী কৃষ্ণা। বরং শোককে আত্মস্থ করে উঠে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিদিন লড়াই করে জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। আর সেই বার্তাই তাঁর মতো আরও অনেক মেয়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবার পথে নেমেছেন তিনি। প্রতিরক্ষা বাহিনীর শহিদ আধিকারিকদের স্ত্রীদের কাছে পৌঁছে যেতে চান কৃষ্ণা। নিজের অদম্য মনোবল সঞ্চার করতে চান তাঁদের মধ্যেও। যাতে এমন মর্মান্তিক ঘটনার সূত্র ধরে আরও এক বা একাধিক জীবন থেমে যাওয়ার মতো ঘটনা না ঘটে। এই লক্ষ্যে কোচি থেকে যাত্রা শুরু করে ইতিমধ্যেই ৯০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন কৃষ্ণা।
আরও শুনুন: কন্যাসন্তান জন্মালেই রোপণ ১১১টি চারা গাছ, কোথায় পালিত হয় এই প্রথা?
স্বামীকে হারানোর পর, একা সন্তানকে নিয়েই লড়াই শুরু করেছিলেন কেরলের মেয়ে কৃষ্ণা। দাঁতে দাঁত চেপে শেষ করেছিলেন নিজের পড়াশোনা। তারপর সংসার চালানোর জন্য অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে সাধারণ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন তিনি। ক্রমে রেডিও জকি-র পদে উন্নীত হন। এতদিনের কর্মজীবনে গোটা দেশের ২৫টি রেডিও স্টেশনে কাজ করেছেন কৃষ্ণা। পাশাপাশি বাঁচিয়ে রেখেছেন বাইকিং-এর শখকেও। আর সেই পছন্দের বাহনটির উপর নির্ভর করেই এই ব্রতে শামিল হয়েছেন তিনি। মোটরবাইকে চড়েই সারা দেশ জুড়ে অভিযান চলছে তাঁর। শহিদ সেনাদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি তাঁদের স্ত্রীদের অনুপ্রেরণা জোগাতে চান কৃষ্ণা। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ, মধ্য এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি ঘুরে ফেলেছেন তিনি। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর এই যাত্রা। আপাতত জুলাই মাসের ২৬ তারিখ নাগাদ সেই যাত্রা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। প্রিয়জনকে অকালে হারালেও, তাঁরা যে নিজেরাই একে অপরের পাশে রয়েছেন, শহিদ-পত্নীদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়ে চলেছেন কৃষ্ণা।