অফিস-কাছারি ছাড়া আজকাল চিঠিপত্রের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। হাতের সামনেই ফোন, হাজার রকম মেসেজিং অ্যাপ। আঙুলের ছোট্ট নড়াচড়াতেই দূর থেকে সুদূরে পৌঁছে যায় যাবতীয় মনের কথা, খবরাখবর। তাই চিঠি মানে আজ শুধুই নস্টালজিয়া। তবু কেউ কেউ আজও সেই নস্টালজিয়াকে ছুঁয়ে দেখতে চান। কাজের ফাঁকে সময় করে কাগজকলম নিয়ে বসে যান প্রিয়জনকে চিঠি লিখতে। যেমন লিখেছেন এই মেয়েটি। আর সেই চিঠি লিখেই জায়গা করে নিতে চলেছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘এক পৃথিবী লিখব আমি…’ – মেঘবালিকার জন্য কবি সেই চিঠি লিখে উঠতে না পারলেও ভাইয়ের জন্য সেই চিঠি লিখতে পেরেছেন দিদি। আর সেই চিঠিই তাঁকে এনে দিতে চলেছে বিশ্বসম্মান। গিনেস বুক অব বিশ্বরেকর্ডেও জায়গা করে নিতে পারেন তরুণী।
ফোন, মেসেজ এসব তো সকলেই করেন। আজকালকার দিনে চিঠি আর কতজনেই বা লেখেন বলুন তো। আর সেই কাজটাই নিজের ভাইয়ের জন্য করে ফেলেছেন কেরলের ইদ্দুকি জেলার এই তরুণী। আর সে চিঠি যে সে চিঠি নয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম চিঠিটি সম্ভবত তিনিই লিখেছেন।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
বিশ্ব ভাতৃদিবসে কাজের চাপে ভাইকে শুভেচ্ছাবার্তাটুকুও জানাতে পারেননি কৃষ্ণপ্রিয়া নামে ওই তরুণী। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণপ্রিয়া। সেদিন দুর্ভাগ্যক্রমে অফিসে এতটাই কাজের চাপ ছিল তাঁর, অন্যদিকে তাকানোর সময়টুকুও পাননি তিনি। এদিকে দিদির মেসেজের অপেক্ষা করে বসে আছেন ভাই। অর্ধৈর্য হয়ে দিদিকে স্ক্রিনশট তুলে মনেও করিয়ে দেন সে কথা। জানান, বাকি সবার শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে গেলেও দিদির কাছ থেকে কোনও বার্তাই কিন্তু এখনও পাননি ওই তরুণ। তবে কাজের চাপে সেই মেসেজটি দেখারও সময় করে উঠতে পারেননি তখন কৃষ্ণপ্রিয়া। ততক্ষণে অবশ্য ভাই রেগেমেগে দিদিকে ব্লকই করে দিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপে। অগত্যা চিরাচরিত চিঠির পথই ধরতে বাধ্য হলেন তরুণী।
শেষমেশ কাগজ-কলম নিয়ে বসলেন চিঠি লিখতে। সত্যিই সেই চিঠিতে ‘এক পৃথিবী’র সমস্ত কথা ধরিয়ে ফেলেছেন তিনি। হবে না-ই বা কেন। সেই চিঠি লিখতে কৃষ্ণপ্রিয়ার লেগেছে প্রায় ১৫ রোল কাগজ। প্রথমে অবশ্য এ-ফোর পাতাতেই লিখবেন ভেবেছিলেন। তবে তাতে তাঁর মনের কথা সব ধরেনি। তাই বেছে নেন বিলের কাগজের রোল। আর প্রায় ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় তাতে লিখেও ফেলেন ভাইয়ের জন্য দীর্ঘতম চিঠি।
তবে সেই চিঠিকে ডাকবাক্সে ফেলা তো মুখের কথা ছিল না। ৩০ মিটার দীর্ঘ ওই কাগজের রোলগুলিকে অনেক কষ্টে একটা বাক্সে প্যাক করে তা সেলোটেপ আর আঠা দিয়ে মুড়ে ফেলেন কৃষ্ণপ্রিয়া। আর তার পরে তা পৌঁছে দেন পোস্ট অফিসে। যার ওজন ছিল কমপক্ষে ৫.২৭ কিলোগ্রাম। দৈর্ঘে ছিল তা ৪৩৪ মিটার।
আরও শুনুন: একাই একশো! ঘাঁটিতে ঢুকে ৪০ জন রুশ সেনাকে ঘায়েল করল ইউক্রেনের ছাগল
ভাই কৃষ্ণপ্রসাদের কাছে যখন চিঠির বাক্স পৌঁছয় তখন বিস্ময় ধরে রাখতে পারেননি তিনি। প্রাথমিক ভাবে তো ভেবেছিলেন জন্মদিনের উপহার। পরে দেখেন, এ আসলে দিদির কাছ থেকে আসা পৃথিবীর দীর্ঘতম চিঠি। ইতিমধ্যেই সেই চিঠির জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আবেদনও করেছেন ওই তরুণী। ভাতৃদিবসে যে এমন উপহারও পেতে পারেন, তা বোধহয় ভাবতে পারেননি কৃষ্ণপ্রসাদ। এটি তাঁর জীবনের সেরা উপহার বলেও জানিয়েছেন তিনি।