এ দেশে দলিত নিগ্রহের ঘটনা কোনও নতুন বিষয় নয়। দিন কয়েক আগেই দলিত মহিলার রান্না করা মিডডে মিল খেতে আপত্তি জানায় উত্তরাখণ্ডের একটি স্কুলের পড়ুয়ারা। ফের তেমনই ঘটনার সাক্ষী রইল যোগীরাজ্য। দলিত হওয়ায় চরম হেনস্তার শিকার হতে হল এক ডেলিভারি বয়কে। সেই ঘটনায় দায়ের হল অভিযোগও। ঠিক কী হয়েছিল, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের বাজারে দলিতদের কদর থাকলেও সত্যিই কি সমাজে বদলেছে তাঁদের অবস্থান? প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা। তাই বারবার নানাভাবে উচ্চবর্গের হাতে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে দলিত কিংবা নিম্নবর্গের মানুষদের। এটাই গোটা দেশের বাস্তব। কখনও এলাকার শ্মশানে তাঁদের দেহ সৎকারে আপত্তি জানানো হয়, তো কখনও মৃত মেয়ের শরীর কাঁধে তুলে নিয়ে ফিরতে হয় দলিত বাবাকে। কখনও আবার আপত্তি জানানো হয়ে তাঁদের হাতের ছোঁয়া খেতেই। আর ফের একবার তেমনই ঘটনা ঘটল উত্তরপ্রদেশেল লখনউতে। দলিত হওয়ার ‘অপরাধে’ চরম হেনস্থার শিকার হতে হল এক ডেলিভারি বয়কে।
আরও শুনুন: উচ্চবর্ণের জন্য নির্দিষ্ট পাত্র থেকে জলপানের ‘অপরাধ’, দলিত ছাত্রীকে বেধড়ক মার শিক্ষকের
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? প্রতিদিনের মতোই খাবার ডেলিভারি করতে বেরিয়েছিলেন বিনীত কুমার রাওয়ত নামে ওই ব্যক্তি। খাবার ডেলিভারি করার সময় হঠাৎই তাঁর নামপরিচয় জানতে চান এক ব্যক্তি। আর পরিচয় পেয়েই শুরু হয় অশ্রাব্য গালিগালাজ। পুলিশকে ওই যুবক জানিয়েছে, তাঁর ছোঁয়া খাবার মুখে তোলা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
না, এখানেই শেষ নয়। বাড়ি ফেরার পথে মাঝরাস্তায় হঠাৎই তাঁকে ঘিরে ধরে ১৪ জনের একটি দল। জাত তুলে অশ্রাব্য মন্তব্যের পাশাপাশি শুরু হয় মারধর, শারীরিক অত্যাচার। এমনকী গুটখা খেয়ে তাঁর মুখে থুতু ফেলারও অভিযোগ ওঠে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।
আরও শুনুন: দলিত শিশু মন্দিরে প্রবেশ করায় ‘মহাপাপ’, শুদ্ধিকরণে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা
ঘটনার পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন বিনীত কুমার নামে ওই ব্যক্তি। অভিযুক্তদের মধ্যে থেকে দুজনকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করেছে পুলিশ। যার মধ্যে একজন অজয় সিং নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেই জানতে পেরেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে এফআইআরও। বাকি ১২ জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। গোটা ঘটনায় দায়ই তিনি ঠেলেছেন উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় থাকা যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উপরে। তাঁর কথায়, বিজেপি সরকারের আমলেই দলিত হিংসার ঘটনা বেড়েছে রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর মদতেই বারবার এমন ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অখিলেশ আরও বলেন, যোগী সরকার শুধু যে দলিতদের হেনস্থাই করছে তা নয়, তাঁদের আত্মসম্মান ও অধিকার নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে।
এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন লখনউয়ের পুলিশ কমিশনার ডি কে ঠাকুর। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও দলিতদের নিয়ে এই যে ছুঁৎমার্গ, তা দেখে বিস্মিত নেটিদুনিয়া। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন নেটনাগরিকেরাও।