চলার পথে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা আমাদের গোটা জীবনটাকে ওলটপালট করে দেয়। তবে তারপরেও হাল না-ছেড়ে লড়ে যাওয়ার নামই যে জীবন, সে কথাই ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন এই ব্যক্তি। পক্ষাঘাতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুধমাত্র মনের জোরে ভর করেই তিনি জয় করে ফেললেন আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো। তা-ও আবার হুইল চেয়ারে চেপে। আসুন, শুনি তাঁর সেই সাফল্যের গল্প।
পাহাড় ডিঙানো সহজ কথা নয়। পাঁচ বছর আগে জবাব দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পাহাড় চড়া তো দূর, সামান্য হাঁটাচলার ক্ষমতাও তখন হারিয়েছেন তিনি। তবে হার মানেননি ম্যাঞ্চেস্টারের বাসিন্দা মার্টিন হিবার্ট। পক্ষাঘাত, মানসিক ট্রমা, সব কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। সম্ভব পাহাড় ডিঙানোও।
আত্মঘাতী জঙ্গির থেকে সেদিন মাত্র পাঁচ মিটার দূরে ছিলেন হিবার্ট ও তাঁর মেয়ে ইভ। তখন ইভের বয়স মাত্র ১৪ বছর। সেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণে গুরুতর চোট পান হিবার্ট। বিশেষত ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁর মেরুদণ্ড। হিবার্টের চোখের সামনে সেদিন মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২২ জনের। জখম হন শতাধিক মানুষ। সেই হামলায় তাঁর বাঁ দিকটা পড়ে যায়। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন হিবার্ট।
আরও শুনুন: বয়স মোটে ৫, এর মধ্যেই আস্ত একখানা বই লিখে গিনেস বুকে নাম তুলল খুদে
সেই ঘটনা তাঁর জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে পাঁচ-পাঁচটা বছর। তবে হারাতে পারেনি তাঁর মনের জোরকে। সম্প্রতি মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো চড়লেন বছর পঁয়তাল্লিশের হিবার্ট। আফ্রিকার সবচেয়ে উচ্চতম শৃঙ্গ সেটি। সাধারণ চোখে যাঁরা অক্ষম বা প্রতিবন্ধী , তাঁরাও যে ইচ্ছাশক্তির জেরে যে কোনও কাজ করে ফেলতে পারেন অনায়াসেই, সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন হিবার্ট। পাশাপাশি স্পাইনাল ইনজিউরি অ্যাসোসিয়েশনের জন্য অনুদানও একত্রিত করতে চেয়েছিলেন হিবার্ট। আর পাহাড় চড়ার মাধ্যমে সেই কাজটাও করে ফেলেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ ইউরো জোগার করে ফেলেছেন তিনি।
সাপোর্ট টিম ও স্থানীয় গাইডদের সঙ্গে করে তানজানিয়ার দিক দিয়ে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোতে পৌঁছন হিবার্ট। হুইল চেয়ারে চেপেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। তাঁর এই গোটা সফরটাই ক্যামেরাবন্দি করেছেন তাঁর সহ-অভিযাত্রীরা। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পাঁচ বছর আগে বিছানায় পড়ে যাওয়া হিবার্ট যে ফের উঠে দাঁড়াতে পারবেন কোনওদিন, সেটাই এককালে ছিল স্বপ্ন। সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর শৃঙ্গ ছোয়াঁটা মুখের কথা ছিল না। আর সেটাই হাসিমুখে করে দেখিয়েছেন হিবার্ট।
আরও শুনুন: রাখে হরি, মারে কে! সমুদ্রে পড়ে গিয়ে হাঙরের মুখে, তবু সাঁতরে প্রাণ বাঁচল যুবকের
তাঁর এই সাহস ও সাফল্য দেখে মুগ্ধদুনিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযানের ভিডিও ভাইরাল হতেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। নিজের এই সাফল্যের পর আরও বেশি প্রত্যয়ী হিবার্ট। জানালেন, পাহাড় চড়া তো হল। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পাহাড়টাকে সরানো বাকি এবার। পাশাপাশি তাঁর বার্তা, ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর থাকলে কোনও পাহাড়ই ততটা উঁচু নয়। ঠিক মতো সমর্থন ও সাহায্য পেলে যে কেউ ডিঙোতে পারেন বাধার পাহাড়। তাঁর এই সাফল্যের গল্পই এখন রীতিমতো চর্চার বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।