প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফুটবল ম্যাচ হোক কিংবা চলন্ত বাসের ড্রাইভারের সিট- প্রকৃতির ডাক এলে আর কোনও কিছুতেই মন দেওয়া সম্ভব হয় না। ব্যতিক্রম নেই বিখ্যাত ফুটবলারদের ক্ষেত্রেও। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ম্যাচের মাঝেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বিখ্যাত ফুলবলাররাও। কারা ঘটিয়েছেন এমন কাণ্ড, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ফুটবল খেলা চলাকালীন আপনি কি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মাঠ ছাড়বেন? সাধারণ ভাবে কাউকে এমন প্রশ্ন করলে খুব সহজে এই উত্তর আসবে, না। টানটান উত্তেজনা পূর্ণ ম্যাচ টিভিতে দেখার সময়ও উঠতে চান না অনেকেই। কিন্তু ভাবলে অবাকই হতে হয় যে, দর্শক যা করতে চান না, তাই-ই করতে বাধ্য হয়েছেন বিখ্যাত ফুটবলাররা। অর্থাৎ ম্যাচ চলাকালীনই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মাঠ ছেড়েছেন তাঁড়া। ভাবছেন তো, এমন ফুটবলার কে আছেন? আসুন, এমন জনা পাঁচেকের গল্প শুনে নিই।
প্রথমেই উঠে আসে সারজিও র্যামোসের নাম। রিয়াল মাদ্রিদ্র ক্লাবের এই ফুটবলার সবার কাছেই যথেষ্ট পরিচিত। ২০১৮ সালে একটি ম্যাচের একেবারে শেষভাগে পৌঁছে হঠাৎ দেখা যায় র্যামোস মাঠের বাইরে। উভয়পক্ষই তখন একটি করে গোল প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়ে দিয়েছে। এরকম চরম উত্তেজনার মুহূর্তে ক্যাপ্টেন র্যামোস-কে মাঠে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়েন সবাই। শেষমেশ যা জানা যায় তা হল, শর্টস বদলাতেই নাকি মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। অর্থাৎ নেপথ্যে ছিল সেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার গল্প।
আরও শুনুন: অন্তর্বাসের নেই লিঙ্গভেদ! প্যান্টি পরে এবার প্রথা ভাঙলেন পুরুষ মডেল
এরপর শোনা যাক এরিক ডায়ারের কথা। ২০২০ সালের কারাবাও কাপে সেদিন ছিল চেলসির বিরুদ্ধে তাঁর দলের ম্যাচ। গোটা মাঠ যখন সমর্থকদের চিৎকারে ফেটে পড়ছে, তখনই দেখা গেল মাঠ ছেড়ে বাইরের দিকে দৌড়চ্ছেন ইংল্যান্ডের ফুটবলার এরিক। আর তার পিছনেই ছুটছেন জস মোরিনহো। সবাই ভেবেছেন হয়তো কোনও গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। দর্শকাসনে সবার মনই ধোঁয়াশা ঢেকে গিয়েছে। কেউই বুঝতে পারছেন না আসলে ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছে? বেশ খানিকক্ষণ পর জানা গেল, একেবারেই গুরুতর কিছু নয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেই মাঠ ছেড়েছিলেন ডিফেন্ডার এরিক ডায়ার। ঘটনা প্রসঙ্গে এরিক নিজেই পরে বলেছেন, সেদিনের আচরণে মোটেই খুশি হননি তাঁর টিমমেটরা। কিন্তু প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে আর কোন উপায়ই ছিল না তাঁর। ভাগ্যক্রমে সেদিন তার দল টোটেনহাম জিতেও যায় চেলসির বিরুদ্ধে। নাহলে কে জানে এই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য কী মাশুল গুণতে হতো এরিককে!
পরের নামটি, পিয়ের এমরিক আওয়ামেয়াং। আরসেনালের এই ফুটবলার একবার ম্যাচের মাঝেই কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যান। এমনকী তাঁর কোচকেও কিছু জানাতে পারেননি তিনি। খেলা তখন বেশ উত্তেজনায় ভরপুর। ব্রিঘটনের বিপক্ষে আরসেনালের স্কোর তখন ২-১। ম্যাচ শেষ হতে বাকি মাত্র কয়েক মিনিট। এমনই সময় অকস্মাৎ মাঠ থেকে উধাও পিয়েরে। সাধারণত এরকম চরম মুহূর্তে মাঠ ছাড়ার কথা কেউ ভাবতেই পারেন না। সেখানে পিয়েরে ছিলেন স্ট্রাইকার। প্রকৃতির ডাককে উপেক্ষা করতে না পেরে সেদিন মাঠ ছেড়ে বেরিয়েছিলেন পিয়েরে। আর ফিরে আসেন ম্যাচের একেবারে শেষের মুহূর্তে। সেদিনের ম্যাচে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তাঁর দল। এই ভরাডুবির কারণ হিসেবেই অনেকেই পিয়েরের সেই আকস্মিক অন্তর্ধান আজও মনে রেখেছে।
আরও শুনুন: রাতারাতি বদলে গেল রং, কেরলের ‘গোলাপি নদী’ দেখতে ভিড় পর্যটকদের
এরপর অবশ্যই যাঁর নাম বলতে হয়, তিনি হলেন গ্যারি লি্যেনকার। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মাঠের বাইরে যাওয়ারও সময় পাননি তিনি। তাও একেবারে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই। হঠাৎ দেখা যায় ইংল্যান্ডের এই ফুটবলার মাঠের মাঝেই বসে পড়েছেন। শারীরিকভাবে যে তিনি অস্বস্তিতে আছেন, তা তাঁকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ক্যামেরাবন্দি সেই মুহূর্ত বেশ মজার দৃশ্য হয়ে থেকে যায় পরবর্তীকালে। পরে গ্যারি টুইট করে জানিয়েছিলেন, ম্যাচের দিন সকাল থেকেই তাঁর শরীর ভালো ছিল না। ম্যাচ থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার ভয়ে কাউকে সেকথা না জানিয়েই খেলতে নেমেছিলেন মাঠে। প্রথম থেকেই পেটে ব্যথা সহ্য করে খেলেও গিয়েছেন অনেকক্ষণ। কিন্তু তবুও আটকাতে পারেননি প্রকৃতির ডাক। মাঠের মাঝে এরকম ঘটনার জন্য দীর্ঘদিন হাসির পাত্র হয়েই ছিলেন গ্যারি।
আরও শুনুন: স্তন ছোট বলেই বাদ পড়েছেন সিনেমা থেকে, বলিপাড়ার গুপ্তকথা ফাঁস করলেন রাধিকা
সবশেষে বলতেই হয় রবি স্যাভেজের কথা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাকে গুনতে হয়েছিল দশ হাজার ডলার। তবে তার গল্প খানিকটা আলাদা। ম্যাচ শুরুর আগে ভেঙে ফেলেছিলেন ম্যাচ রেফারির টয়লেটের দরজা। এতটাই তাড়া ছিল তাঁর, রেফারির ব্যবহারের বাথরুমেই ঢুকে যান ম্যাচের আগে। আর তারপর সেই দরজা খুলেই চলে যান মাঠে।
অর্থাৎ ফুটবলের মাঠ হোক বা অন্যত্র- প্রকৃতির ডাককে যে উপেক্ষা করা যায় না কিছুতেই, এই ঘটনাগুলো থেকেই তার প্রমাণ মেলে।