কথায় আছে বয়স কোনও বাধাই নয়। ইচ্ছের জোরে পেরিয়ে যাওয়া যায় বয়সের টানা সীমানা। বারবার এই কথাই সত্যি করে দেন কিছু মানুষ। যেমন করেছেন এই ব্যক্তি। আশি বছর বয়সে পৌঁছেও দেশের অন্যতম সেরা আইআইটি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসলেন তিনি। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই ব্যক্তি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জীবনের আশিটা বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন তিনি। দেখেছেন অনেক ওঠাপড়া। তবুও, নতুনের প্রতি আকর্ষণ এতটুকু কমেনি তাঁর। যে বয়সে আর পাঁচজনকে বার্ধক্য গ্রাস করে, সেই বয়সে পৌঁছেও তিনি এখনও যুবকের মতোই তরতাজা। অবসরের আরাম ছেড়ে ফের জীবনের স্রোতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চান নন্দকুমার কে মেনন। আর তার জন্য কী করলেন তিনি?
আরও শুনুন: কপ্টারের ভিতরেই বিলাসবহুল ঘর, দু’বছরের চেষ্টায় সাধের হেলিক্যাম্পার তৈরি করলেন দম্পতি
মাত্র মাস দুই পরেই আশির গণ্ডি পেরিয়ে একাশি বছর বয়সে পা রাখবেন চেন্নাইয়ের অধিবাসী ওই ব্যক্তি। পেশার দিক দিয়ে একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। সাফল্যের সঙ্গে কর্মজীবন শেষ করে যখন তাঁর অবসর জীবন উপভোগের পালা, সেই সময়েই নিজের ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণের জন্য নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করেছেন নন্দকুমার কে মেনন। প্রোগ্রামিং আর তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করতে চান তিনি। আর সেইজন্যই দেশের অন্যতম সেরা আইআইটি, আইআইটি মাদ্রাজের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও বসে পড়েছেন তিনি। প্রোগ্রামিং এবং ডেটা সায়েন্স নিয়ে স্নাতক স্তরের একটি অনলাইন কোর্স রয়েছে এই সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই কোর্স করার ছাড়পত্র পেতেই সম্প্রতি হাজার হাজার অল্পবয়সি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে বসে পড়েন ওই ব্যক্তি। যদিও পরীক্ষার হলে ঢুকতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে দেখে পরীক্ষার্থী বলে বিশ্বাসই করতে চাননি কেউ। এমনকি নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে হলে ঢুকতে দিতেই চাইছিলেন না বলেও জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। অবশেষে অ্যাডমিট কার্ড ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করে হলে ঢোকার সুযোগ পান তিনি। চার ঘণ্টা ধরে পরীক্ষাও দেন। তাঁর কথায়, ৫০ বছর আগে যা শিখেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা হাতড়েই সেদিন উত্তর খুঁজেছেন তিনি।
আরও শুনুন: জুম কলে ছাঁটাই করেছিলেন ৯০০ কর্মীকে, এবার প্রতারণা কাণ্ডে অভিযুক্ত সেই কুখ্যাত সিইও
যদিও কেবল পুরনো অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে নয়, এই পরীক্ষাটির জন্য রীতিমতো প্রস্তুতিও নিয়েছেন ওই ব্যক্তি। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা পড়াশোনা করে গিয়েছেন তিনি। পরীক্ষার জন্য চার সপ্তাহের একটি প্রস্তুতিমূলক ক্লাসেও ভরতি হয়েছিলেন তিনি। আসলে কোনও হুজুগ নয়, নিজের ইচ্ছের টানেই যে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেনন। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকায় স্নাতক স্তরে ভরতি হয়েছিলেন অঙ্ক নিয়ে। স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে করেছেন মাস্টার্স ডিগ্রি। এরপর অবশ্য থিরুবনন্তপুরমের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকেও স্নাতক হন মেনন। তারপর নাসার দেওয়া স্কলারশিপের জোরে মার্কিন মুলুকের এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। বিষয় ছিল ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বিদেশি নাগরিকত্বের সুযোগ পেলেও দেশের টানে আবার ভারতের মাটিতেই ফিরে এসেছিলেন তিনি। এখানেই ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন কাটিয়েছেন তিনি। এবার আরও একবার নতুন কাজের দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন আশি বছরের ওই ব্যক্তি। যিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, বয়স আসলে একটি সংখ্যা মাত্র।