ক্রেতাদের চমকে দিতেই নিত্যনতুন ভাবনার আমদানি বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায়। কিন্তু চমক সৃষ্টি করতে গিয়েই বিষয়বস্তু এমন দিকে গড়ায় যে, ক্রেতা তথা সাধারণ মানুষের মনে তা কোনও আবেদন তৈরি করতে পারে না। বরং ক্ষুব্ধ হন তাঁরা। সম্প্রতি একটি পারফিউমের বিজ্ঞাপন সে কারণেই পড়ল জনতার রোষের মুখে। অভিযোগ, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণের সংস্কৃতিকে। ঠিক কী দেখানো হয়েছিল বিজ্ঞাপনটিতে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পারফিউমের বিজ্ঞাপন মানেই যেন একটা চেনা দৃশ্যের অবতারণা। সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষের কাছে দৌড়ে আসছেন নারী। বহু সুগন্ধীর বিজ্ঞাপনই এই চেন ফর্মুলা মেনে এগিয়েছে। আর সে সব বিজ্ঞাপন মানুষের বেশ মনেও ধরেছে। তবে সবকিছুরই বোধহয় একটা সীমারেখা আছে। সেটুকু পার হয়ে গেলেই ক্ষুব্ধ হন মানুষ। সম্প্রতি ‘লেয়ার শট’ নামে এক পারফিউমের বিজ্ঞাপনে সেই সীমারেখা অতিক্রম নিয়েই অভিযোগ তুললেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগের মাত্রা বেশ গুরুতর-ই। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরাসরি ধর্ষণ-সংস্কৃতিরই প্রচার হচ্ছে বলে মত নেটিজেনদের।
আরও শুনুন: রাম সেতুর অস্তিত্ব কি সত্যি আছে? তথ্য আর যুক্তি কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ঠিক কী দেখানো হয়েছিল বিজ্ঞাপনে? মূলত দুটি টিভিসি ঘিরেই উঠেছে আপত্তি। একটিতে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণী একা একা শপিংমলে বাজার করছে। ঠিক তার পিছনে এসে দাঁড়াচ্ছে চার তরুণ। তাদের মধ্যে একজন তরুণ বলে, আছি চারজন, সামনে একজন, কে তাহলে ‘শট’ নেবে? এই কথা শুনে চমকে ওঠে তরুণী। তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে আতঙ্ক। ঠিক তার পরের দৃশ্যেই দেখা যায় পাশেই রাখা আছে একটি লেয়ার শট-এর বোতল। অর্থাৎ চার তরুণ যেন সেই বোতলটিকে লক্ষ্য করেই আগের কথাটি বলেছিল। এই কথা বুঝতে পেরে তরুণীটি আতঙ্কমুক্ত হয়।
অন্য বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায়, এক যুগল নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটাচ্ছে। ঠিক সেই সময় ঘরে ঢোকে কয়েকজন বন্ধু। সেইসময় এক বন্ধু জানতে চায়, নিশ্চয়ই ‘শট’ নিয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে যুবকটি সম্মতি জানায়। প্রেমিকের মুখে এ-কথা শুনে হকচকিয়ে যায় প্রেমিকা। এক মুহূর্তে যেন অচেনা হয়ে যায় প্রেমিকটি। পরের দৃশ্যেই দেখা যায় বিছানার পাশেই রাখা আছে একটি লেয়ার শটের বোতল। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও পারফিউমটিকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলা হয়েছিল।
আরও শুনুন: রুখে দিয়েছিলেন মহম্মদ ঘোরির জয়রথ, পৃথ্বীরাজই কি ভারতের শেষ হিন্দু শাসক?
এই দুটি বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত হতেই বেজায় চটেছেন নেটিজেনরা। তাঁদের প্রশ্ন, এ কেমন বিজ্ঞাপন? এই বিজ্ঞাপন কী বার্তা দিচ্ছে তরুণ সমাজকে? টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে বহু মানুষ এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন যেমনই হোক না কেন, তার তো একটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। যেভাবে দুই বিজ্ঞাপনেই তরুণীর মুখে ভয়ের ছায়া পড়েছে, তা কখনোই কাম্য নয়। যদিও এটা বিজ্ঞাপনের দৃশ্য, তবু যুব সম্প্রদায়ের মুখে এই ধরনের কথাবার্তা কি পরোক্ষে ধর্ষণ-সংস্কৃতিকেই উৎসাহ জোগাচ্ছে না? বা, ধর্ষণের কথা, জোরপূর্বক নারীকে অধিকারের কথাই কি ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলছে না! এই প্রশ্নই তুলেছেন নেটিজেনরা। অভিনেত্রী সন্ধ্যা মৃদুলও এই বিজ্ঞাপনে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ধর্ষণ বা তার ইঙ্গিত এমন কোনও বিষয় নয়, যা নিয়ে মজা করা যায়। অথচ এই বিজ্ঞাপন দুটি সেই কাজই করেছে। এই ধরনের বিজ্ঞাপন কীভাবে ছাড়পত্র পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন অনেকেরই। শুধু মহিলারাই যে এই ধরনের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তা নয়, প্রতিবাদ জানিয়েছেন পুরুষরাও। তাঁরা বলছেন, এই ধরনের বিজ্ঞাপন অত্যন্ত আপত্তিজনক। Advertising Standards Council of India (ASCI)-এর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাবেন বলেও জানিয়েছেন জনৈক নেটিজেন।